সোমবার, অক্টোবর ৭, ২০২৪
Led01সদর

ছাইয়ের সাথে মিশেছে ব্যবসায়ীদের চোখের পানি

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: রাত তখন পৌনে ১২ টা। সবে মাত্র কিছুক্ষন আগে দোকান বন্ধ কর ঘরে এসে হাতমুখ ধুয়ে বসছেন খাবার খেতে। তারপরই আসে ফোন, বিপরতি পাশে থেকে একজন বলে উঠে ‘দোকানে আগুন লাগসে, জলদি আহেন: সব পুইরা যাইতাছে’। খাবার আর গলা দিয়ে নামেনি, কোন রকম হাত ধুয়ে রওনা দিলেন দোকানের উদ্দেশ্যে। এসেই দেখেন কিছুক্ষণ আগে সাজিয়ে বন্ধ করে যাওয়া সেই দোকানটার ভিতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এই আগুনে দোকানে থাকা মালামাল-টাকাপয়সার সাথে পুরছে বহু স্বপ্ন ও পরিকল্পনা। সারারাত মাথা হাত দিয়ে বসে দেখতে হয়েছে অগ্নিকান্ডের ধ্বংসলীলা।

কিছুটা এমনই বাস্তব অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য দিলেন কালিরবাজারের হাসান স্টোরের মালিক আব্দুর রহমান। শুধু তিনি নন, তার মতো এমনই কপাল পুরেছে আরো ৩০ শের বেশি ব্যবসায়ীদের। অগ্নিকান্ডে পুরে গেছে বাজারের হাস-মুরগির দোকান থেকে শুরু করে মসলা, মরিচ ও প্লাস্টিকের বাটি-বালতির দোকানগুলোও।

সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ কালিরবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানগুলোর সামনে পরে আছে বিভিন্ন পন্যের ছাঁই। পোড়া গন্ধ এখনো বাতাসের সাথে মিশে আছে। বাজারের পাশের এক বসতভবন আগুনের কারনে একঅংশ পুরে গেছে। আগুন নিভাতে রাতে ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া পানিতে ভেসে যাচ্ছে গম, ডাল ও চালের দানাসহ আরও কতকিছু। সকাল থেকে এনসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এসে ব্যবসায়ীদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে করছেন পরিষ্কারের কাজ। ভাঙা-পোড়ার স্তুপ থেকে আলাদা করা হচ্ছে ব্যবহার যোগ্য কিছু পন্য। কাল রাত থেকে নিজ নিজ দোকানের পাশেই ছিলেন ব্যবসায়ীরা।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া আরেক ব্যবসায়ি সবুজ মিয়া জানায়, ‘আগুনের পর সকাল থেইকা ভাই আর ভাই পোলা সাথে নিয়া মালামাল ব্যাগে রাখতেসি। কিছু সাবান, শ্যাম্পু, সসের বোতল কোন রকম একটু ভালো আছে সেগুলো নিয়ে যাইতেসি ঘড়ে তো কাজে লাগবো। প্রায় ১২-১৪ লাখ টাকার মাল ছিলো আমার দোকানে, কিচ্ছু বাচাইতে পারি নাই। বেশি দিন হয় নাই , মাল উডাইসি। এই লোকসান কি দিয়া কাটবে এক আল্লাহ জানে।’

একই বাজারের অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া দোকানের মালিক সোহেল বলেন, ‘কাল রাইতে যখন আগুন লাগে তখন এই বাজারের ১নং গলির সামনের ৩-৪ টা দোকান খোলা আছিলো, বাকি সব বন্ধ কইরা চলে গেছে। কিন্তু হটাৎ একটু পর দেখি উপর থেকে একটা আগুনের গোল্লা দোকানের চালের উপর পরলো। তখন বুঝতে পারলাম একটা দোকান থেইকা এই আগুন ছড়াইসে। মুহুরর্তের মধ্যেই আগুন আশেপাশের দোকানে লাইগা গেল। আগুন বেশি ছড়াইছে টিনের চাল দিয়া। কয়েকদিন বৃষ্টির লইগা আমরা দোকানের পাশে রাস্তার উপর কিছু তেরপাল বাইন্দা দিসিলাম। আগুন ছড়াইবো এই ডড়ে লগে কিছু লোক নিয়া এই তেরপালগুলা ছিড়া ফেলছি। এরপর তো ফায়ার সার্ভিস আইছে, পানি দিসে কিন্তু সকালেও কিছু দোকানে আগুন জ্বলসে। এখানের একটা মাঝারি মরিচের দোকানেও ২০-২১ লাখ টাকার মাল আছিলো। আর বড়বড় দোকানে তো কয় এক কোটি টাকার মাল আছিলো সব পুরছে।’

প্রসঙ্গত, গতকাল রাত ১১ টায় মসলা পট্টির একটি প্লাস্টিকের দোকান থেকে আগুনের সুত্রপাত ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৪০ টি দোকান। খবরপেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী আহত হয়।

RSS
Follow by Email