রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
Led01রাজনীতি

চাষাড়া জিয়া হলে জাসাসের চমক, কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো সমাবেশ

# দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা না হলে, দেশের মধ্যে কাম্য করা ঠিক না: গিয়াসউদ্দিন
# আমরা জানি ডিসি ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন: সানি
# জনগণের কল্যাণের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে: স্বপন চৌধুরী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গণসমাবেশ’র আয়োজন করেছে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) চাষাড়া শহীদ জিয়া হল প্রাঙ্গণে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। প্রধান বক্তা থাকবেন নারায়ণগঞ্জ জেলা জাসাস’র সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।

এ আগে দুপুর ২টা থেকে নারায়ণগঞ্জ’র সদর, বন্দর, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে গণসমাবেশে যোগদান করতে শুরু করেন। শহীদ জিয়া হলের পশ্চিমমুখী সমাবেশ স্থলে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক বসার স্থান করা হলেও পরবর্তীতে সাড়ে ৩টার মধ্যে সমাবেশ স্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। উপজেলা ও বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আগত অতিথিরা প্রথমে বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে শহীদ জিয়া হলকে পূণঃসংস্কারের দাবি জানায়।

সমাবেশে প্রধান অতিথি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাশাসনের বিরুদ্ধে আপোসহীস সংগ্রাম করে, আপোসহীন নেত্রী খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। এদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক অঙ্গণে এক বিশেষ অবস্থান দখল করে নিয়েছেন। আমাদের প্রাণ প্রিয় নেতা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাহিরে থেকে দেশের সর্ব বৃহত রাজনৈতিক দল বিএনপিকে, সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে বিএনপির ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। তার নেতৃত্বে আমরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট আমরা যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। যারা তাদের দোসর, সন্ত্রাসী ছিলো তারা আমাদের উপর কি পরিমান অত্যাচার করেছে আপনারা জানেন। নারায়ণগঞ্জের মধ্যে যে গডফাদার ছিলো, তার যে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী ছিলো, তারা আন্দোলন সংগ্রামে কিভাবে গুলি করেছে আপনারা দেখেছেন। তাই নারায়ণগঞ্জের মানুষ সর্বপ্রথম চায়, যারা সন্ত্রাসী ছিলো অন্যায়, অত্যাচার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে তাদের বিচার চায়। স্বৈরাচারী শাসন আমলে এই দেশের মানুষের অর্থ সম্পদ, হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের গডফাদার তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে এমন কোন সেক্টর নাই যেখান থেকে চাঁদাবাজী করে নাই। সরকারী এমন কোন সংস্থা নাই যেখান থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নাই। এই টাকা বিদেশে পাচার করে আজকে তারা সেই টাকা দিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তাই নারায়ণগঞ্জবাসী দাবি তাদের বিচারের দৌরগোড়ায় দ্বার করা হবে।


তিনি আরও বলেন, মাস্তান খারাপ লোকদের নিব না, ভালো লোকদের নিয়ে রাজনীতি করবো। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমরাই গণতন্ত্র চর্চার অনুশীলন করব। দলের মধ্যে গণতন্ত্র না হলে দেশের মধ্যে গণতন্ত্র কাম্য করা ঠিক না। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে। যারা যেটা অভিজ্ঞ তাদের সে কাজ করতে দেওয়া হবে। যে ধ্বংস বিগত সরকার করে গেছে সেই ভাবে যেন কেউ ধ্বংস করতে না পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানদের ভেতর যেন অন্য কেউ ঢুকে শিক্ষকদের অপমানিত করতে না পারে।

গিয়াসউদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে ভালো সাংবাদিকও আছে খারাপ সাংবাদিকও আছে। আমি কথা বলি খারাপ এবং হলুদ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য ভালো সাংবাদিকদের আহ্বান জানাই। হলুদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাদেরই কথা বলা উচিত। কিছুদিন আগে ফতুল্লায় এক সভায় বক্তৃতা দিয়েছিলাম কিন্তু আমার সাংবাদিক বন্ধুরা বুঝতে পারে নাই আমি কি বলতে চেয়েছি। প্রেসক্লাব একটি প্রতিষ্ঠানের নাম কিন্তু এখানে যে সদস্যরা আছে তাদের মধ্যে ভালো খারাপ থাকতে পারে। যেমন ফতুল্লায় তেল চোর, লুটেরা, মাস্তান, জায়গা দখলকারী ওই ক্লাবের সদস্য আছে। আমি অবাক হয়েছি এমন একটি আদর্শের পেশাকে পুঁজি করে তারা এই ধরণের কাজ করে। এই প্রেস ক্লাবের নামকে ব্যবহার করেই ব্যবসা-বাণিজ্য লুণ্ঠন করার চেষ্টা অনেকেই করছে। এজন্য আমি বক্তৃতা দিয়েছি খারাপ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। যারা সাংবাদিক নামে লুটেরা তারা কেন সেই সংগঠনের মধ্যে থাকবে। যারা ভালো সংবাদ আছে তাদের প্রশংসা আমি সকল জায়গায় করি। যারা থানায় গিয়ে দালালি করার পর, তারা যদি প্রেস ক্লাবের পরিচয় দেয়, তাহলে কি তাদের জন্য ভালো সাংবাদিকদের সম্মান ক্ষুন্ন হয় কিনা?

তিনি বলেন, আমি এ কথা বলার পর অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন না বুঝে। প্রতিবাদ করারও অধিকার আপনাদের আছে, তবে কি নিয়ে প্রতিবাদ করছেন সেটা ভেবে নিন। সাংবাদিক তারাই হতে পারে যারা ভদ্র ভাল এবং লেখাপড়া করেছে। কিন্তু বর্তমানে হাজার সাংবাদিক আছেন তারা কতটুকু লেখাপড়া করেছে, তাদের কোন যোগ্যতা নেই কাজ করার ক্ষমতা নেই, তারপর আসে একটা সাংবাদিকের কার্ড নিয়ে সেটাকে বেঁচে খায়।

জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আনিসুল ইসলাম সানি বলেন, স্বৈরাচার সরকারের দোসোররা এই জিয়া হলকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। তারা চেয়েছে জিয়া হলের নামটি যেন নারায়ণগঞ্জবাসীর মুখ থেকে সরে যায়। আজ জিয়া হলের যেখানে এই অনুষ্ঠান হয়েছে, আগামী ১৬ই ডিসেম্বর আমরা শহীদ জিলা হলের মিলন আয়তনে অনুষ্ঠান করবো। প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে জিয়া হল সংস্কার করে এটি পূর্ণকার্যক্রম করার জন্য ব্যবস্থা নিবেন। ডিসি এই যে জিয়া হল পরিচালনা কমিটির সভাপতি । এই সংস্কার না করা হলে আপনার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। আমরা জানি আপনি ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। যেখানে সারা বাংলাদেশ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি অপসারণ করা হলো, সেখানে আপনি খুব সুন্দর ভাবে মূর্তি রেখে দিয়েছেন, এমনকি কাপড় দিয়েও ঢেকে রেখেছেন। আমাদের দাবি যে মূর্তি আপনি গোপন এবং যত্ন সহকারে ঢেকে রেখেছেন সেই মূর্তিটি অপসারণ করতে হবে সাত দিনের মধ্যে যদি এই এক সপ্তাহের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি অপসারণ না করা হয় তাহলে আমরা কার্যালয় ঘেরাও করে মূর্তি ভেঙে ফেলবো।

জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা নারায়ণগঞ্জ মহানগর‘র সভাপতি মো. স্বপন চৌধুরী বলেন, আমি আমার জাসাসের নেতাদের নিয়ে গর্ব করি। আপনাদের সকলের প্রতি আমার দিক নির্দেশনা হলো, আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আদর্শকে বুকে ধারণ করে আগামী দিনের বিএনপির রাজনীতি করে যাবেন। জনগণের কল্যাণের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। জনগণের কাছ থেকে তাদের মূল্যবান ভোট আদায় করার জন্য, জনগণের ভালোবাসায় পেতে আপনারা নিজেদের রাজনীতি করবেন।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানর জাসাস’র সভাপতি মো. স্বপন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আনিসুল ইসলাম সানি। এ সময় আরও উপস্থিস ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা সভাপতি এড. সরকার হুমায়ূন কবীর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এড. জাকির হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু প্রমুখ।

RSS
Follow by Email