চাঁনমারিতে জমির মালিকানা দাবির ঘটনায় লঙ্কা কান্ড, কী হয়েছিল সেদিন?
# সুনাম নষ্ট করতে স্বৈরাচারের দোষররা অপপ্রচার চালাচ্ছে: রিন্টু
# দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের জমিতে সাইনবোর্ড লাগাতে আসে: রাজিব
# ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর কোন মারামরি, ভাঙচুর ও লুটপাট দেখিনি: এএসআই আতিক
# জমির মালিক দাবী করা রাজীব একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন: ওসি
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ফতুল্লায় চাঁনমারি এলাকায় ৪২ বছর আগে ক্রয় সূত্রে সাড়ে ২৬ শতাংশ জমির মালিক হয় রিফাতুল্লাহ ওরফে রিন্টু। অল্প বয়সেই প্রবাস জীবন শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন সময় দেশে আসলেও অধিকাংশ সময় প্রবাসে কাটান। দেশের মাঁটিতে এসে কয়েকবার নিজের ক্রয়কৃত জমি দখলে নিতে চায়, তবে বার বারই ব্যর্থ হয় দখল নিতে। তার অভিযোগ ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা কালীন, নানা রকমের ভয় দেখিয়ে জমিটি দখল করে রাখা হয়েছিলো। ভীতিতে কখনোই প্রতিবাদ করতে পারেনি নিজের জমি দখলদারদের’।
তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অর্ন্তবর্তী কালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহন করার পর নতুন এক প্রত্যাশা তৈরী হয়েছে রিফাতুল্লাহ ওরফে রিন্টুর মাঝে। ন্যায়ে বিচারের মাধ্যমে আইনের সহায়তা নিয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ফিরে পেতে চায় তার মালিকানাধীন জমি। তারই ধারাবাহিকতায় সেই জমি পরিদর্শন ও জায়গার মাপ দিতে গিয়ে পড়তে হয় বিপত্তিতে।
রিফাতুল্লাহ ওরফে রিন্টু এ জানায়, একদিন আগে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে ও সহায়তা চেয়ে পরিদর্শনে যায় রিন্টু। পুলিশ উপস্থিত হওয়ার ১০ মিনিট আগেই সেখানে যায় তিনি। তার দাবি বর্তমানে যারা সেখানে আছেন তারা তাঁর জমি দখল করেছেন। তবুও মালিকপক্ষ দাবি করা তাইজুল ইসলাম রাজীবের সাথে কথা বলতে চেয়ে জমির দলিল দেখতে চেয়েছেন রিন্টু। তবে সে সেই দলিল দেখাতে পারেনি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, দুইজন মালিক দাবিদারকে জমির সঠিক দলিল দেখে মিমাংশার আশ্বাস দিয়েছে। নির্ধারিত সময় ঠিক করার পরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রিফাতুল্লাহ ওরফে রিন্টু।
এদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে জমির মালিক দাবি করা তাইজুল ইসলাম রাজীব জমিতে স্থাপিত কিছু স্থাপনা লুটপাট ও সংবাদপত্রের ভবন ভাঙচুরের অভিযোগ তোলেন।
ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে জমির মালিকানা দাবি করা তাইজুল ইসলাম রাজীব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ জমিটি প্রায় তিন দশক আগে আমার বাবা জমিটি কিনেছে। এরপর থেকেই জমিটি আমরা ভোগ দখল করে আসছি। আজ সকালে এক উপদেষ্টার ভাগ্নে পরিচয়ে রিন্টু বাহিনী আমাদের জমি দখল করতে আসে। প্রায় দুই শতাধিক সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের জমিতে সাইনবোর্ড লাগাতে আসে। এসময় তারা আমার নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করে। সিসি ক্যামেরা ও দৈনিক উজ্জীবিত বাংলাদেশ পত্রিকার সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে। তারা জমিটির ভেতরে ভাড়া দেয়া গোডাউন এর তালা ভেঙ্গে ভাড়াটিয়াদের মালও লুট করে। এক ব্যবসায়ী নেতা গতকাল আমাদের এক প্রতিনিধিকে ফোন করেছিলেন। জমিটি নিয়ে এক উপদেষ্টার স্বামী তাকে ফোন দিয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে বসতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই আজ সকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এই বিষয় সদ্য বিদেশ ফেরত রিফাতুল্লাহ ওরফে রিন্টু বলেন, দীর্ঘ সময় পর আমি বিদেশ থেকে এসেছি। স্বৈরাচারের আমলে অনেকেই জমি ভোগ দখল করেছে। এখন স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, তাই এসেছিলাম আমার বাপ-দাদার সাড়ে ২৬ শতাংশ জমিটুকু মেপে নিতে। দলিল অনুযায়ী জমির পাশেই যার প্লট তাকেও লোক দিয়ে ডাকিয়েছি, যেহেতু জমি মাপছি উনিও আমার পাশের জমির মালিক তাই নিয়ম অনুযায়ী ওনাকেও ডেকেছি। আমরা আমিনের লোক ও থানা থেকে পুলিশও এনেছিলাম। আমরা সেখানে যাওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ফতুল্লা মডেল থানার দুইজন পুলিশ সদস্য এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু এক পর্যায় রাজীব নামের একজন লোক আমাদের সাথে বাকবিতণ্ড করার উদ্দেশ্যে রাগান্বিত ভাবে কথা বলে। আমরা সেখানে প্রস্তাব দিয়েছি কাগজ নিয়ে দেখানোর, কাগজে-দলিলে যে সঠিক হবে সেই জমির মালিক হবে। কিন্তু তারা বাকবিতণ্ড করেই যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে পুলিশের সদস্যের সামনেই দলিল-কাগজ নিয়ে শনিবার আসরের পর ফতুল্লা থানা ওসির অফিসে বসার সময় ও তারিখ ঠিক হয়। তখন এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকা অবস্থায় আমরা সেখান থেকে চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, বাসায় এসে জানতে পারি তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে পত্রিকা অফিস ভাঙচুর ও গোডাউন লুটপাটের অভিযোগ দিচ্ছে। তারা আমাকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলেও আখ্যা দিচ্ছে। আমি বহু বছর বিদেশ থেকে কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছি, আমি শীর্ষ সন্ত্রাসী কোথা থেকে হলাম। পত্রিকা অফিসের সামনে সিসিটিভি ছিল। তারা ফুটেজ দেখিয়ে প্রমাণ দেখাক আমি ভাঙচুর তো দূরে থাক, খারাপ ব্যবহার করেছি। আমরা সেখানে থাকা পর্যন্ত কোন রকমের ভাংচুর, মারধর বা লুটপাটের কোন ঘটনা ঘটেনি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিচ্ছে সেটা মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি ভাঙচুর বা লুটপাটে জড়িত ছিলাম এমন কোন প্রমাণ তারা দেখাতে পারলে আমার বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থা নেয়া হোক। ওখানে যে পুলিশ সদস্যরা ছিল, তাদেরকেও জিজ্ঞেস করা হোক আমি বা আমার কোন লোক ভাঙচুর করেছে কিনা।
রিফাতুল্লাহ ওরফে রিন্টু বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে আমরা বিচার পাইনি, নতুন এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমি এ ঘটনা সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যে দোষী হোক তাকে যেন যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয়। আমার পরিবারের সুনাম নষ্ট করার জন্য স্বৈরাচারের দোষররা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ফতুল্লা মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আতিকুল রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর কোন মারামরি, ভাঙচুর ও কোন লুটপাট দেখিনি। আমরা উপস্থিত থাকা অবস্থায় এমন কোন কিছুই আমাদের চোখে পড়েনি। আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর জমির মালিক দাবি করা দুইপক্ষই তারা বসে মিমাংসা করার জন্য রাজি হয়েছে। শনিবারে তারা ফতুল্লা থানায় প্রত্যেকের আইনজীবী নিয়ে বসে মিমাংসা করবে।
এই ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনচার্জ) শরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত ছিলো। বাকবিতণ্ডা হয়েছে তবে কোন হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। উভয়পক্ষে আলোচনার মাধ্যমে শনিবার বাদ আছর স্থানীয়ভাবে সমাধান করবে বলে জানিয়েছে। এই ঘটনায় জমির মালিক দাবী করা তাইজুল ইসলাম রাজীব একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।