চর সৈয়দপুরে সেই বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার ঘটনায় ‘স্বামী-স্ত্রী’ গ্রেপ্তার
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: চর সৈয়দপুর থেকে সেই বস্তাবন্দী নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কুমিল্লার কোতয়ালীর ইয়াকুবের ছেলে মো. জীবন (৩০), পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সৈয়দ আ. মান্নানের মেয়ে নুসরাত জাহান মীম (৪০)।
সোমবার (১ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পিবিআই জানায়, ৩ মার্চ চর সৈয়দপুরে হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ শনাক্ত করে জানা যায়, নিহত নারী হলেন ঝালকাঠির নগেন্দ্ররাথ কর্মকারের মেয়ে অনন্যা কর্মকার (৩৫)। পরে ৫ মার্চ নিহত নারীর ভাই থানায় মামলায় দায়ের করেন, যার তদন্তভার ২৭ মার্চ পিবিআই গ্রহণ করে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মো. জীবনকে কুমিল্লা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সাথে ৩০ মার্চ নুসরাত জাহান মীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআই‘র তদন্তে জানা যায়, অনন্যা কর্মকার(৩৫) নারায়নগঞ্জ সদর থানার চর সৈয়দপুরে স্বামী হরে কৃষ্ণ এর সাথে বসবাস করতেন। স্বামী শাহ সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করতেন। তবে তিনি আনুমানিক এক বছর আগে মারা যান। অনন্যা কর্মকারের কোন সন্তান ছিল না। তার বাসার পাশেই থাকতেন আসামি নুসরাত জাহান মীম। তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ না থাকায় সে তার ননদের সাথে চর সৈয়দপুরের বাসায় থাকতেন। প্রতিবেশী বলে অনন্যার সাথে মীমের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামি নুসরাত নুসরাত জাহান মীম, অনন্যা ও কথিত স্বামী মো. জীবনের সহায়তায় ফতুল্লার শিবু মার্কেটের পাশে সস্তাপুরে বাসা ভাড়া নেয়। আসামি মো. জীবন নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়াতেন। ২ মার্চ অনন্যা বাথরুমে গেলে তার মোবাইল চেক করে আসামি জীবন জানতে পারে অনন্যা তার ভাই আমেরিকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। ৪ মার্চ সকাল সাড়ে ১০ টায় মো. জীবন আড়াইহাজার থেকে পালা গান শেষে সস্তাপুরে ফিরে আসে। ঐদিন গ্যাসের চাপ কম থাকায় মো. জীবন কথিত স্ত্রী নুসরাত জাহান মীম, অনন্যা ও নিজের জন্য বাইরে থেকে খাবার আনে। এসময় জীবন অনন্যার খাবারে ঘুমের ঔষধ মিলিয়ে দেয়। খাবার খেয়ে অনন্যা কর্মকার কিছুক্ষণের মধ্যেই তদ্রাচ্ছন্ন হয়। এক পর্যায়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য মো. জীবন অনন্যার রুমে যায়। এসময় অনন্যা তাকে দেখে চিৎকার দিলে মো. জীবন বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে সে নুসরাত জাহান মীমের সহায়তায় অনন্যার মৃতু নিশ্চিত করে এবং দুই জন মিলে লাশ গোপন করার সিদ্ধান্ত নেয় । প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে তারা লাশ পেচিয়ে দেয়। তারা সন্ধ্যা আনুমানিক ৭.৩০ ঘটিকার সময় বাসা পরিবর্তনের কথা বলে ২৫০ টাকায় একটি অটো ভাড়া করে। চর সৈয়দপুর এলাকায় এসে ঢাকা হতে মুন্সিগঞ্জগামী রাস্তায় লাশ ফেলে মো. জীবন ও নুসরাত জাহান মীম পালিয়ে যায়।
মামলার প্রাথমিক তদন্তকালে বর্ণিত হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামিদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ৩১ মার্চ মামলার আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হলে আসামি মো. জীবন (৩০), বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলম এর আদালতে এবং আসামি নুসরাত জাহান মীম (৪০), বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হায়দার আলীর আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার পরবর্তী তদন্ত অব্যাহত আছে বলে জানায় পিবিআই।