‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন’ কর্মসূচিতে ১ লাখ চারা রোপণ সম্পন্ন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: “নারায়ণগঞ্জ হবে সবুজে ঘেরা, প্রাচ্যের ডান্ডি হবে বিশ্ব সেরা”—এই প্রত্যয় নিয়ে শুরু হওয়া ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচি এক অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বৃহস্পতিবার সাইনবোর্ড এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ১ লক্ষতম গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এই ঐতিহাসিক বৃক্ষরোপণের উদ্বোধন করেন, যা নারায়ণগঞ্জ জেলাকে একটি সবুজ ও টেকসই শহরে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য নিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বিগম ১০ মে ঢাকা বিভাগের মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার জনাব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন।
জেলা প্রশাসনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ও নগরায়ণের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ হিসেবে গত দুই মাস ধরে এই বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকা, জেলার পাঁচটি উপজেলা, ৩৯টি ইউনিয়ন, ৫টি পৌরসভা, ৪২টি সরকারি দপ্তর, ৩১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৮০.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক এবং ৪ কিলোমিটার খালের পাড়জুড়ে একযোগে এই সবুজায়ন কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
বৃক্ষরোপণের জন্য স্থানীয় ও বিদেশি মিলিয়ে মোট ৪৮ প্রজাতির গাছ নির্বাচন করা হয়েছে। এই গাছগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাখির আবাসযোগ্যতা, বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ উপযোগিতাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিদেশি প্রজাতির মধ্যে রয়েছে চেরি, গোলাপি ট্রাম্পেট, জাকারান্ডা, ফক্সটেল পাম, গ্লোরিয়া সিরিয়া এবং রেইন ট্রি-এর মতো মনোমুগ্ধকর গাছ। উল্লেখযোগ্যভাবে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে সর্বোচ্চ সংখ্যক — ৩ হাজার পিস দেবদারু গাছ রোপণ করা হয়েছে, যা সড়কটিকে সবুজ ও মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে মোড়ানো একটি পরিচ্ছন্ন করিডোরে রূপান্তর করেছে। এছাড়া, হাজিগঞ্জ দুর্গ ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক স্পটকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সবুজায়নের আওতায় আনা হয়েছে, যা নারায়ণগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
জেলা প্রশাসন আরও জানায়, এই কর্মসূচিকে সফল করতে জেলা প্রশাসকের আহ্বানে এক অনন্য সম্মিলিত অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়েছে। জেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা এবং সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পরিবেশ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। এটি কেবল একটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিই থাকেনি, বরং নারায়ণগঞ্জে এটি এক সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে—যেখানে প্রত্যেকেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিজের দায়িত্ববোধ অনুভব করছেন।
পর্যটনবান্ধব নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক সৌন্দর্যবর্ধক গাছের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে, যা নগরের দৃশ্যমান সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে জড়িত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ১৫৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ১০০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ৬৬০ জন বাগান শ্রমিক, অগণিত স্বেচ্ছাসেবী এবং অন্তত ২০টি সামাজিক ও পরিবেশ সচেতন সংগঠন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ১ লক্ষ গাছ রোপণের মাইলফলক অর্জন সম্ভব হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা এমন একটি নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই, যেখানে নাগরিক সুবিধা, পরিবেশ রক্ষা ও ঐতিহ্য একসাথে লালিত হবে। এই কর্মসূচি সেই স্বপ্নের পথচলার সূচনা।”