গার্মেন্টস শ্রমিক অভ্যুত্থান দিবসে সমাবেশ
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: আট ঘণ্টা কাজ ও ওভারটাইম মজুরিসহ ১৮ দফা দাবিতে ২০০৩ সালের ৩ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ শ্রমিক নেতা আমজাদ হোসেন কামালের আত্মত্যাগের ২২ বছর পূর্তি উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এই শহীদ নেতার আত্মদান থেকে শিক্ষা নিয়ে ন্যায্য মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জেলা শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৩ সালের ৩ নভেম্বর ফতুল্লার বিসিকে প্যানটেক্স ড্রেস লি. গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ১৮ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে মালিকের ইন্ধনে পুলিশ বর্বরোচিতভাবে গুলি চালায়। এতে শ্রমিক আমজাদ হোসেন কামাল নিহত হন এবং দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হন।
বক্তারা উল্লেখ করেন, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সারা নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক অভূতপূর্ব শ্রমিক অভ্যুত্থান সংগঠিত করে। এর ফলে মালিকপক্ষ শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বসে দাবি মেনে নেওয়ার চুক্তি করতে বাধ্য হয়। সেই থেকে প্রতিবছর ৩ নভেম্বর গার্মেন্টস শ্রমিক অভ্যুত্থান দিবস হিসাবে পালিত হয়।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, অভ্যুত্থানের ২২ বছর পরেও শ্রমিকের ওপর মালিকের জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত আছে।
তারা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষ জীবন দিয়েছে যার অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ। অভ্যুত্থানের পর গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন তার রিপোর্ট পেশ করলেও রিপোর্ট বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। “পক্ষান্তরে আমরা দেখছি জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, দারিদ্রতা বাড়ছে, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, হাজার হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত হচ্ছে,” বলেন তারা।
এই অবস্থায়, ছাঁটাই-নির্যাতন বন্ধ এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দেন বক্তারা।
দিনের শুরুতে সকাল ৮টায় বিসিক ২নং গেইটে শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয় এবং শহীদ আমজাদ হোসেন কামালের মৃত্যুর স্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক আবু নাঈম খান বিপ্লব এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হিমাংশু সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সাচ, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আবু হাসান টিপু, গার্মেন্টম শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অঞ্জন দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই শরীফ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টম শ্রমিক সংহতির জেলার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান উজ্জ্বল এবং বিপ্লবী গামেন্টস শ্রমিক সংহতির জেলার নেতা রাশিদা বেগম ও রাশিদা আক্তার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
