মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
Led01জেলাজুড়েরূপগঞ্জ

ক্ষুব্দ স্বজনেরা উদ্ধার করলো মানুষের খুলি-হাড়সদৃশ বস্তু

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: গাজী টায়ারস কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পেরিয়ে গেছে ৬ দিন। তবুও ভবনে উদ্ধারকাজ ঝুকিপূর্ন বলে ‘সার্চ’ অভিযান শুরু করেনি তদন্ত কমিটি ও সংশ্লিষ্টরা। এমন অভিযোগে ক্ষুব্দ হয়ে অগ্নিকান্ডে ধংসস্তুপ কারখানার ভিতরে প্রবেশ করে, নিহতদের মাথার খুলি ও হাড় বের করে এনেছে বলে দাবি করছে স্বজনেরা।

রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) রূপগঞ্জের রপসী এলাকার অগ্নিকান্ডে পুরে যাওয়া গাজী টায়ার কারখানায় ঘটে এমন ঘটনা। স্বজনদের আহাজারিতে আবার ভারী হয়ে উঠে সম্পূর্ন এলাকা। মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের হাড় নিয়ে কান্নাকাটি করছেন তারা।

স্বজনরা জানায়, অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজের নাম-পরিচয়ের তালিকা করা হয়। পরবর্তিতে সেটা অস্বীকার করে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এরপর ছাত্ররা এসে ১২৮ জনের নাম লিপিবদ্ধ করে। তৃতীয় দফায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাম-পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে চাইলে ক্ষুব্দ হয় স্বজনেরা। এক পর্যায় তারা কারখানার সামনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে স্বজনদের বুঝিয়ে শুনিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। পরে নিখোঁজদের সন্ধানে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ঐ ভবনে বেশ কয়েকজন স্বজন ঢুকে পড়েন। সেখান থেকেই বেশ কয়েকটি মাথার খুলি ও হাড়গোড় পেয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

আহাজারি করে এক স্বজন বলেন, ‘ওরা খালি মানুষ ডুকাইয়া আগুন দিয়া তালা মাইরা রাখসে। আমি লগে লগে আইসি আমার সন্তনের জন্যে, আমার সন্তানরে দেখতে পারলাম না। আমার সন্তনের ১৫ বছর বয়স’

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, আজ আমরা নাম-পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে যাই নি, শুধু বক্তব্য শুনতে গিয়েছিলাম। সেই প্রেক্ষিতে ৮০ জনের বক্তব্য শুনেছে। সেখানে স্বজনেরা একটু ক্ষুব্দ হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছিলো তবে তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে গণশুনানি করতে গিয়েছিলো। নিখোজদের স্বজনেরা সেখানে এসে তাদের বক্তব্য দিয়েছে। তবে তাদের ভিতরে এক প্রকার আবেগ কাজ করে। তারা মহাসড়ক অবরোধ করে দাবি করে সেই ঝুকিপূর্ন ভবনে তারা ডুকে উদ্ধার করবে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়িয়ে দেই। তবে যারা বলছে যে মাথার খুলি ও হাড় পেয়েছে, সেটা আসলেও হাড় কিনা তা বোঝার উপায় নেই।

এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানের সাথে একাধিক বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, অগ্নিকান্ডের পর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তিতে ২৮ আগস্ট বিকেলে জেলা অতিরিক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে ভবন পরিদর্শণে আসে তদন্ত কমিটি। পরিদর্শন শেষে ৪, ৫ ও ৬ তলার ফ্লোরটি ধসে যাওয়ায় উদ্ধার কার্যক্রম সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন হামিদুর রহমান। প্রয়োজনে ন্যাশনালী সাপোর্টের জন্য সুপারিশ জানাবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। এরপর গত ২৯ আগস্ট সকালে পরিদর্শনে আসেন বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহসান। পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি বলেন, ‘ভবনটিতে প্রবেশ করে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক’। একই দিন ভবনের নিচতলার বেইজমেন্টে ড্রোনের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তির অস্তিত্ব পায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিশ্চত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান।

RSS
Follow by Email