খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম নিয়ে কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: অর্ধযুগ ধরে জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, অযত্ন আর অবহেলায় মাঠটির করুণ দৃশ্য সকলেই জানা। জৌলুস হারিয়ে রীতিমতো দুঃখছে। বারবার অভিযোগ আর সমালোচনার পরেও কোন উদ্যোগ নেই নি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। অবশেষে স্টেডিয়ামটিকে খেলার উপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
ইতোমধ্যে মাঠটি উঁচু করার কাজ শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর বল গড়াবে এ মাঠে।
মাঠটি এক সময় আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ভ্যানু ছিল। এখানেই টাইগারদের সাথে খেলে গেছে কোহল-পন্টিংরা। কচুরী পানা আর জীর্ণশীর্ণ স্থাপনে দেখে এখন তা আর বুঝার উপায় নেই। বহু আগেই হারিয়েছে আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামের মান। মূল মাঠের ডিজিটাল স্কোরবোর্ড অকেজো, ফ্ল্যাডলাইট সব চুরি হয়ে গেছে, দর্শক ছাউনি ও আসন ভাঙা, প্রেস বক্সে বসার মত অবস্থা নেই, ভিআইপি গ্যালারি আর খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমও ব্যবহারের অনুপযোগী। আউটার স্টেডিয়াম কচুরিপানা ছিল বছরের পর বছর, বর্ষা মৌসুমে থৈ-থৈ পানি গড়িয়ে আসতো মূল মাঠের মধ্যে। বারবার অভিযোগ আর সমালোচনার পরেও দীর্ঘ ৬ বছর কোন উদ্যোগ নেই নি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। অবশেষে মাঠটি উঁচু করে খেলার উপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি। ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি।
বিসিবির পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটু জানান, বুয়েটের নির্দেশনা অনুযায়ী ৬ ফিট ও ৪ ফিট উঁচু করা হবে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। থার্ড ডিভিশন, ফার্স্ট ডিভিশন ও প্রিমিয়ার লীগ খেলা পরিচালনা হবে। আপতত এ খেলা গুলো পরিচালনা করার জন্য মাঠটিকে খেলার উপযোগী করে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর্ন্তজাতিক ভ্যানু ফিরিয়ে আনার জন্য এ মাঠে ব্যাপক সংস্কার দরকার। সংস্কার এনএসসিই করবে। সেটা কবে হবে, এটা এনএসসিই বলতে পারবে।
২০০০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঘটা করে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার খেলার মধ্য দিয়ে ২০০৬ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ গড়ায় এখানে। মাঝে এই মাঠে খেলে গেছে বাংলাদেশের সাথে নিউজিল্যান্ড ও ভারত। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ম্যাচের পর আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ এই মাঠে হয়নি। বর্তমানে মাঠটিতে দু-একটি ক্লাবের খেলা ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘদিন পরে হলেও এই মাঠের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি ক্রিকেট প্রেমীরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) অপরারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক ক্রিকেটার আকরাম খান বলেছেন, বাংলাদেশের খেলোয়ারদের অপরচুনিটি দিতে ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে অনেক গুলো মাঠ নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তারই অংশ হিসেবে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম নিজেস্ব অর্থায়নে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাঠটা যদি আমরা ভালো ভাবে তৈরি করে দিতে পারি, ভালো অপরচুনিটি পাবে খেলায়াররা। এতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক উপকার হবে।
আন্তর্জাতিক মর্যাদাপ্রাপ্ত এ মাঠটি এক সময় নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য গর্বের বিষয় ছিল। তবে, এখন তা আতঙ্কের কারণ। নিরাপত্তা বেষ্টনী দূর্বল হওয়ায় মাঠে প্রবেশ করতে পারছে যে কেউ। এই সুযোগ নিয়েছে মাদক সেবী ও চোর। তবে, আশার কথা হচ্ছে মাঠটি খেলার উপযোগী হলে দুঃখ ঘুচিয়ে সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে বলে মনে করছে নারায়ণগঞ্জবাসী।