কুতুবপুর ইউপিকে সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আইনি নোটিশ
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ফতুল্লার গুরুত্বপূর্ণ কুতুবপুর ইউনিয়নকে সম্পূর্ণরূপে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (এনসিসি) অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে এবার আইনি পদক্ষেপ নিলেন সুপ্রিম কোর্টের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী। স্থানীয় সরকার বিভাগের আংশিক অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুর রহমান খান, যিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট ৫ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
মঙ্গলবার প্রেরিত এই নোটিশে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক সহ মোট ৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। নোটিশ প্রদানকারী অ্যাডভোকেট খান কুতুবপুরের বাসিন্দা।
তিনি নোটিশ প্রাপ্তির আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কুতুবপুর ইউনিয়নকে সম্পূর্ণভাবে এনসিসির আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায়, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি, গত ০৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সীমানা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই প্রজ্ঞাপনে সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ‘আংশিক অংশকে’ সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কিন্তু অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান তার লিগ্যাল নোটিশে যুক্তি দিয়েছেন যে, প্রশাসনিক প্রেক্ষাপট ও বৃহত্তর জনস্বার্থ বিবেচনায় আংশিক নয়, কুতুবপুরের সম্পূর্ণ অংশকে সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত করাই যৌক্তিক, প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী।
নোটিশে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে কুতুবপুর ইউনিয়ন তিনদিকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন দ্বারা এবং একদিকে বুড়িগঙ্গা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত হবে। ফলে ইউনিয়নটি কার্যত সিটি কর্পোরেশনের পরিসেবা থেকে বিচ্ছিন্ন ও প্রশাসনিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়বে। একই ইউনিয়নের কিছু অংশ সিটি কর্পোরেশনে ও বাকি অংশ ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে থাকলে প্রশাসনিক জটিলতা ও নাগরিক সেবায় চরম ব্যাঘাত ঘটবে। তিন দিকে সিটি কর্পোরেশন দ্বারা প্রভাবিত হলে সীমিত সুযোগ-সুবিধার ইউনিয়ন পরিসরে জীবন নির্বাহ কঠিন হবে।
আইনজীবী খান নোটিশে কুতুবপুর ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। যেখানে প্রায় ৩ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। শিল্প-বাণিজ্য, নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা, আবাসিক এলাকা, বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মুন্সিখোলা এলাকা এখানে অবস্থিত।
তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “একটি ইউনিয়ন পরিষদের সীমিত বাজেট ও জনবল দিয়ে এই বিশাল জনসংখ্যাবহুল অঞ্চলের উন্নয়ন, রাস্তাঘাট সংস্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
নোটিশে আরও বলা হয়, কুতুবপুরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী, বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অপর্যাপ্ত। এছাড়া প্রায় সারা বছর অনেক এলাকা জলাবদ্ধ থাকায় বিপুল জনসংখ্যার জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এনসিসির সন্নিকটে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলকে সম্পূর্ণরূপে সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত করে উন্নত অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রস্তাবিত সীমানা নির্ধারণের ফলে শুধু কুতুবপুর ইউনিয়ন নয়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসনেও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। কুতুবপুর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় মাত্র ৩টি ইউনিয়ন থাকবে এবং কুতুবপুরের সাথে অন্য কোনো ইউনিয়নের সীমানা বা সংযোগ থাকবে না। এর ফলে উপজেলা পরিষদ গঠনও কঠিন হয়ে পড়বে।
লিগ্যাল নোটিশে অ্যাডভোকেট খান আশা প্রকাশ করেন, বাস্তবতা, যুক্তি ও বৃহত্তর জনস্বার্থের প্রেক্ষিতে নোটিশ গ্রহীতারা নোটিশ প্রাপ্তির ৩ (তিন) দিনের মধ্যে কুতুবপুর ইউনিয়নকে সম্পূর্ণরূপে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।