‘কাজের চাপ বেড়েছে কিন্তু শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণা ও শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন হামলা-মামলা হয়রানি বন্ধ করে প্রচলিত শ্রম আইন বাস্তবায়ন’সহ, শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী আইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের দাবিতে, ‘বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ করা হয়েছে। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ ও শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ওই বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক এম এ শাহীন। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি আ. হাই শরীফ, সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস, জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন, সদস্য নুর ইসলাম আক্তার, আরিফ, মোস্তাকিম, আমজাদ হোসেন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে, ঘর ভাড়া, পরিবহন ভাড়া বেড়েছে, চিকিৎসা খরচ বেড়েছে। ফলে জনজীবনের ব্যয় বেড়েছে বহু গুণ। প্রাপ্ত মজুরিতে শ্রমিকরা অতিরিক্ত খরচ সামলাতে পারছে না। কম খেয়ে না খেয়ে চরম সংকটে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। জীবন বাঁচাতে তাঁরা অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যা দেশের অর্থনীতি ও শিল্পের অমঙ্গল বয়ে আনবে। শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থেই তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করে মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের জীবনমানের কোন উন্নতি হচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, অন্যদিকে মালিকরা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে উন্নত দেশে সেকেন্ড হোম তৈরি করে আয়েশি জীবন-যাপন করছে। বিশ্ব বাজারে পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিযোগি দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদের শ্রমিকরা সবচেয়ে কম মজুরি পায়। সিপিডির গবেষণা অনুযায়ী ৪ সদস্যের একটি পরিবারের মাসিক খরচ ৪৭ হাজার ১৮২ টাকা, জাতিসংঘের গবেষণায় ৪১ হাজার ৪০০ টাকা, বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় দারিদ্রসীমার উপরে উঠতে হলে মাথাপিছু দৈনিক ২ ডলার আয় করতে হবে। সে হিসেবে কমপক্ষে একজন শ্রমিককে সর্বনিম্ন ৩২ হাজার টাকা মাসে আয় করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংকের সর্বনিম্ন বেতন ২৯ হাজার টাকা। শিক্ষানবিশ কলীন ২৮ হাজার টাকা এবং অফিস সহকারী, প্রহরী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বেতন ২৪ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ দেশের অর্থনীতিতে যে শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে তাঁদেরকে সবচেয়ে কম মজুরি দিয়ে চরমভাবে ঠকানো হচ্ছে। এই ব্যাভিচার আর চলতে দেয়া যায় না।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, পোশাক শিল্পের অর্ডার বেড়েছে, শ্রমিকদের উপর কাজের চাপ বেড়েছে কিন্তু শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চীন-ভীয়েতনামকে পিছনে ফেলে শীর্ষে উঠেছে বাংলাদেশ। শ্রমিকের শ্রম ঘামে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, জিডিবি বেড়েছে, সরকারের হিসেব অনুযায়ী মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সবকিছুই বাড়ছে শুধু পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে না। সরকার মালিকদের পক্ষ অবলম্বন করে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে টালবাহানা করছে। এতে সারাদেশের শ্রমিকদের মনে চরম ক্ষোভের জন্ম নিচ্ছে। এই ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপ নিলে সামাল দেয়া যাবে না। তাতে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায়দায়িত্ব সরকার ও মালিকদেরকেই নিতে হবে। তাঁরা আরও বলেন মালিকরা আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে বে-আইনি ভাবে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে দিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও আইনি পাওনা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন, হামলা-মামলা হয়রানি করে শ্রমিকদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাঁদের এই বে-আইনি কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। শিল্পের উৎপাদনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হলে প্রচলিত শ্রম আইনের বাস্তবায়ন ও শ্রমিক বিরোধী আইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখী বাজার ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে চলতি মাসের মধ্যেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করার জন্য নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।