রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Led02রাজনীতি

কমিটি করতে গঠনতন্ত্র মানেনি আনেয়ার-খোকন, অভিযোগ জিএম আরাফাতের

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন সদর-বন্দরের ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে সম্পৃতি বেশ কিছু মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন, কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিএমর আরাফাত। শুধু তাই নয়, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে নিয়েও কিছু মন্তব্য করেন সাবেক এই ছাত্র নেতা। যার কারণে অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েছেন নবঘোষিত কমিটির নেতাকর্মীরা।

এ নিয়ে গত ১ জুলাই বন্দর উপজেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওইসব ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা সহ মহানগরের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

এসময় নেতৃবৃন্দরা জিএম আরফাতের মন্তব্যে জন্য সাবধান করার পাশাপাশি গণধোলাইয়ের হুশিয়ারিও দেন। এছাড়াও নানা ক্ষুব্ধ বক্তব্য প্রদান করেন ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীরা।

এ বিয়য়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা হয় সাবেক এই ছাত্র নেতা জিএম আরাফাতের সাথে।

আলাপকালে জিএম আরাফাত বলেন, ‘আমি কখনো কোথাও পদের জন্য বক্তব্য রাখিনি। আমি কখনো বলিনি যে, আমি সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হতে চাই। আমার সৃষ্টি রাজপথে, এই পথ আমায় কোথায় নিয়ে যাবে, সেটা রাজপথই জানে। আমার বক্তব্য ছিলো এটা।’

তিনি বলেন, ‘মুনতাসির মামুনের বইয়ে নারায়ণগঞ্জে যে সকল রাজাকারদের নাম আসছে, তার মধ্যে ইসহাক নামের একজনের নাম আছে। উনি শান্তি কমিটিতে ছিলেন। এটা আমি জানতাম না। এটা আমাকে মহানগর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী সাহেব জানিয়েছিলেন। উনি বলেছিলেন এর সন্তান মো. জসিম উদ্দিন, যাকে ১৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে। আমি তাকে বলেছিলাম এটা আপনি আমাকে কেন বলছেন। আপনি এটা নিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে যান। তাকে পরে হয়তোবা কোন ভাবে মিনিমাইজ করছে। যার কারণে পরে এই কথা আর উঠে নাই। আমার কথা ছিলো সাবেক কাউন্সিলর ফয়সাল আহাম্মেদ সাগর, যার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। তবে, তারা অনেক আগে থেকে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। আমি শুধু বলেছিলাম, সাগর ভালো লোক। বঙ্গবন্ধুর কথাই আমি বলেছিলাম। এরকম একটি ঘটনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের একটি ঘটনা ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজিবনী’ বইয়ে লেখা আছে। সেখানে একটি লোককে কমিটিতে নেওয়া নিয়ে দুইজনের মধ্যে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়। কেননা বঙ্গবন্ধু নীতির পক্ষে কোন আপোস করেন নাই। এই বই এর লেখা থেকেই আমি আমার বক্তব্য দিয়েছি, কোন বানানো কথা বলিনি।’

নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এখন বলি যে তাদের গাত্রদাহ কেন হয়েছে। কারণ, আমি যে সকল বক্তব্য দিয়েছি, তার একটিও তারা ভঙ্গতে পারে নাই। কারণ আমি ডকুমেন্টের কথা বলেছি। আমি বলেছি, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার আসামীর সন্তানকে সভাপতি করেছে। আমি যে মিথ্যা কথা বলেছি, কই কেউ তো এই কথা বললো না।’

আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে কমিটির কোন বিষয়েই ডাক দেওয়া হয়নি। ১৬নং ওয়ার্ডে আমার বাবা মরহুম আলম চান দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামী লগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। আমার বাবা একেএম শাসসুজ্জোহা ও আরী আহাম্মেদ চুনকা সাহেবদের সাথে রাজনীতি করেছে। দায়িত্বের কথা বাদ দেন, আমি ওই ওয়ার্ডের সন্তান। কমিটি করার সময় কই আমাকে তো একবারও জিজ্ঞেস করা হয়নি। আমার ভাই সাব্বির আহাম্মেদ সাগর, যে আওয়ামী লীগের অফিসে তালা মেরেছিলো। সে এই দলের দুঃসময়ের কর্মী। সে ১৬নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারি ক্যান্ডিডেট ছিলো। একবার তো আলোচনা করা উচিত ছিলো।’

গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে মহানগর আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘ওনারা তো সব পকেট কমিটি করছে। সম্মেলনে প্রথম অধিবেশনে আলোচনা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে সাবজেক্ট কমিটি হয়। এসময় যদি একের অধিক প্রার্থী থাকলে সমঝোতা যদি না হয়, তাহলে নির্বাচন হবে। একেক ওয়ার্ডে ৮/১০জন করে প্রার্থী ছিলো। কোথাও কি নির্বাচন করেছে তারা? শেখ হাসিনা কি তাদের বলেছে যে তোমরা নির্বাচন না করে ড্রয়িং রুমে বসে কমিটি দিবা। তারা তো গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি কাজ করেছে। আমাদের ১৬নং ওয়ার্ডে যার কোন ভুমিকাই নাই। গত ১৫-২০ বছরে দলে যার কোন ছায়া পর্যন্ত নেই। তাকে এসে সভাপতি বানানো হয়েছে। মগের মল্লুক নাকি। এত সহজ। আমরা কি ভেসে আসছি নাকি। আমার বাড়ি দেওভোগ। বাবা আওয়ামী লীগের নেতা। ছাত্র লীগও আমি দুঃসময়ে করেছি। মামলা খেয়ে পালিয়ে পালিয়ে ঘুড়েছি। তবুও এলাকা ছাড়ি নাই।’

বন্দর ২৪নং ওয়ার্ডে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের ক্ষব্ধ ব্কতব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘যারা ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছে, এগুলা তো গোনায় ধরি না। আমি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে না। ওনারা আমার কাছে সম্মানীয়। তবে, আমি বলেছি নিয়মের কথা। যৌক্তিক কথা বলতে গিয়ে যদি আমার আরও কিছু করতে হয়, আমি করবো। খোকন দা বলছে আমি সাহস কোথা থেকে পাই। আরে আমি তো বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সাহস পাই। সাহসের কি দেখেছেন। তারা নীতি আদর্শের বাইরে কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার জননেত্রেী শেখ হাসিনার নির্দেশের বাইরে কাজ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আনোয়ার সাহেব ও খোকন সাহেব যদি আরও ২০ বছর মহানগরের দায়িত্বে থাকে, এতে আমার তো কোন আপত্তি নাই। আমি তো নিজের জন্য কিছু বলি নাই। আমি বলেছি ত্যাগিদের কথা। আমিও তো চাইলে ডেইলি প্রোগ্রাম করতে পারি, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি। তবে আমি তো পাগল না।’

রিমোট কন্ট্রলে পরিচালিত হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রিমোট কনন্ট্রোলটা কে, সেটা তো বলতে হবে। আমাকে চালানোর মতো নেতা, নারায়ণগঞ্জে তৈরি হয় নাই।’

RSS
Follow by Email