রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Led01Led05বিশেষ প্রতিবেদনসদর

এ যেনো না.গঞ্জে ফুচকার হাট, তরুণ-তরুণীদের প্রিয় জায়গা এখন ‘শহীদ মিনার’

# মেয়ে মানুষ মানেই হচ্ছে ফুচকা প্রেমি, এতে সন্দেহ নেই: শিক্ষার্থী
# বাসা থেকে বের হলেই টেন্ডেন্সি থাকে ফুচকা খেতে হবে: তরুণী
# পুলিশ-মোবাইল কোর্টের চাপ থাকতো, ৫ আগস্টের পর নাই: ফুচকা বিক্রেতা

সামিতুল হাসান নিরাক, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ফুচকা খেতে ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। মচমচে ফুচকা আর তার সঙ্গে থাকা টক ঝাল পানিতে-আলু ও ঘুগনি পুরে খাওয়ার আগে সবারই জিভে জল এসে যায়। বাংলার নারীদের, রুচি সম্মত এই খাবারটিতে থাকে বিশেষ আকর্ষণ। অলি,গলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেট, পার্ক ও বিনোদন মূলক জায়গায় পাওয়া যায় ফুচকা। বিশেষত স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ফুচকার স্টল হরহামেশা চোখে পড়ার মতো। নারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের খাবারের মধ্যে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার।

নারায়ণগঞ্জে প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ ও নারায়ণগঞ্জ কলেজ শহর কেন্দ্রীক হওয়ায়, শিক্ষার্থীদের কাছে শহীদ মিনার হয়ে উঠেছে অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। সকাল থেকে রাত অব্দি শহীদ মিনার জুড়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫টিরও বেশী স্টল থাকে ফুচকা বিক্রেতাদের। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই শিক্ষার্থীরা দল বেধে ছুটে আসে শহীদ মিনারে। মিনারের ভেতরে তরুণীদের হাতে ফুচকার বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিত্য দিনের চিত্র। ব্যবসায়ীদের জন্যও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থাকে কেনাবেচার উপযুক্ত সময়। বিকালটা বিক্রেতাদের কোন রকম কাটালেও, সন্ধ্যার পর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার, বন্ধু-বান্ধবী ও সহপাঠীদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুচকা প্রেমিরা ভীর জমায় দোকান গুলোতে। দেখলে মনে হয় এ যেনো এক ফুচকার হাট।

ফতুল্লা থেকে শহীদ মিনারে ফুচকা খেতে এসেছেন শিক্ষার্থী লামিয়া। সাথে ছিলো চাচাতো-খালাতো-মামাতো ভাইবোন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, শহীদ মিনারে আসার মেইন উদ্দেশ্য হলো ফুচকা খাওয়া। বাহিরে অনেক ফুচকা থাকলেও শহীদ মিনারের মতো ফুচকা পাওয়া যায় না। এখানে ফুচকার স্বাদটাই আলাদা। এখানে ভাইবোনরা মিলে আসছি ফুচকা খেতে। আমাদের মধ্যে কেউ ঝাল কম খায়, কেউ বেশী খায়। তবে মেয়ে মানুষ মানেই হচ্ছে ফুচকা প্রেমি, এতে কোন সন্দেহ নেই। অনেক জায়গায় ফুচকা পাওয়া যায় কিন্তু শহীদ মিনারের ফুচকার মধ্যে একটা ভিন্নতা পাওয়া যায়। ফুচকার সাথে চটপটি, ভেলপুরি, চা, স্ট্রিটফুড পাওয়া যায়, তবে মূল আকর্ষণ ফুচকা। আর ফুচকার সাথে কোন তুলনা হয়না। শহীদ মিনারে এসে ফুচকা ছাড়া কখনো ফেরৎ যাইনি।

মাসদাইর থেকে ফুচকা থেতে এসেছেন লুবনা আক্তার। বন্ধুদের পাশে রেখেই ফুচকার বাটি হাতে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ফুচকা খেতে। একটি ফুচকা মুখে নিয়ে কামড় দিতে দিতে বলেন, ফুচকা হলো মেয়েদের প্রিয় একটি খাবার। সব মেয়েদের বলবো না, তবে আমি বেশ পছন্দ করি ফুচকা। শহীদ মিনারে আসলেই আমার ফুচকা খাওয়া হয়। বাসা থেকে বের হলেই মাথায় টেন্ডেন্সি থাকে যে, ফুচকা খেতে হবে। অনেক জায়গায় ফুচকা খেয়েছি, তবে শহীদ মিনারের ফুচকায় একটা আলাদা টেস্ট পাওয়া যায়। ফুচকা মেয়েদের একটা আলাদা ভালোবাসা, মেয়ে মানেই ফুচকা। ফুচকায় টক, ঝাল ও মিষ্টি টেস্ট দিয়ে খাওয়া যায়। তবে আমার কাছে ঝালটাই বেশী ভালো লাগে।

নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনারে আসলে ফুচকা খাবে না, এমন নারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ফুচকার চাহিদা অনুযায়ী বেড়েছে ফুচকার দোকানও। ৫-৬টা দোকানদার দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ফুচকার দোকান আছে। কেউ কেউ শুধু ফুচকা বিক্রি করলেও অধিকাংশ বিক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী চটপটি,ভেলপুরি, ঝাল মুড়িসহ নানান রকমের খাবার পরিবেশন করেন ক্রেতাদের কাছে।

প্রায় ১৪ বছর যাবত শহীদ মিনারে ফুচকা বিক্রি করেন মো. আনোয়ার হোসেন। ফুচকার পাশাপাশি ভেলপুরি ও চটপটিও বিক্রি করেন তিনি। ভ্রাম্যমান আদালত দোকান উঠিয়ে দিলেও পরিচিত কাস্টমার তাকে ঠিক খুঁজে বের করেন। যেনো তার ফুচকার স্বাদ নিতেই আসেন ফুচকা প্রেমিরা। ফুচকা বিক্রেতা মো. আনোয়ার হোসেন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, সকাল ১১টা থেকে দোকান খুলে বসি শহীদ মিনারে। প্রায় ১২টার সময় কাস্টমারের চাপ পরে একটু বেশী। কলেজ গুলো ছুটি হলেই চাপ বেড়ে যায়। তবে মাঝখানে ২-৩ ঘন্টা গ্যাপ থাকে। বিকালে ৩টার পর আবার বেচাকেনা শুরু হয়, রাতের ১১টা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। সকালের সময় কলেজের কাস্টামার গুলা বেশী আসে। তবে বিকালে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে। প্রতিদিন প্রায় ২৬শ’ থেকে ৩ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়, এর মধ্যে সাত থেকে আটশ টাকার মতো লাভ হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা যৌথ পরিবারে থাকি, এই টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। আগে পুলিশ, পৌরসভা, মোবাইল কোর্টের চাপ থাকতো। আমাদের উঠায় দিতো আমাদের ফুচকার জিনিসপত্র ফালায় দিতো। দেখা যেতো সেদিন আর লাভ হতো না, উল্টো লস হইতো। আমাদের জিনিসপত্র ফালায় দিলেও আবার আসতে হইতো, কারণ কিছু পরিচিত কাস্টমার আসতো। তাদের জন্য হলেও আসতে হইতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর এগুলার ঝামেলা নাই।

RSS
Follow by Email