উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে রফিউর রাব্বি ‘গণঅভ্যুত্থান কোন রাজনৈতিক দলের একক কৃতিত্ব নয়’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো মধ্যে কোন কোন স্কুলে প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। মসজিদের ইমামকে বরখাস্ত করে কমিটি দখল করা হচ্ছে। আমাদের নারায়ণগঞ্জে বিদ্যা নিকেতন স্কুলটি দখল করা হয়েছে প্রধান শিক্ষকের অব্যহতি দিয়ে। আমরা দেখছি বিভিন্ন মাজারে হামলা হচ্ছে, এটি একটি ভয়াবহতার আলামত। আমরা দেখছি আমাদের কেউ কেউ উপদেষ্টারা হামলার বিরুদ্ধে বললেও প্রকৃত অর্থে তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে, নিরবতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় হামলাকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে। গতকাল সিলেটে হযরত শাহ পরানের মাজারে হামলা করা হয়েছে। এমন দুঃসাহস কিভাবে পায়, কি মনে করছে তারা। যে যেই অনুসারী হোক আমরা কাউকে বাধা দিতে চাচ্ছি না। বিভিন্ন মত পদ ধারণ করাই হলো একটি সভ্য দেশের চরিত্র। আপনারা মওদুদীবাদ হন আর ওহাবী হন আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু মওদুদীবাদ আর ওহাবীবাদ যদি কারো উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চান, আপনারা সেখানে মনে করবেন না যে মানুষ এটা গ্রহন করবেনা।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ দখল এবং মাজার ধ্বংসের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে সমাবেশে তিনি এসব কতা বলেন।
রফিউর রাব্বি বলেন, আমরা আমাদের উপদেষ্টাদের স্বরণ করিয়ে দিতে চাই যে, যে গণঅভ্যুত্থান তৈরী হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এতে যেমন ছাত্রদের অবদান একমাত্র নয়, তেমনি কোন রাজনৈতিক দলের একক কৃতিত্ব নয়। এখানে আমাদের দেশের সকল মানুষ রাজপথে নেমে আসার কারণে, এই অভ্যুত্থান হয়েছে ও শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ এই জন্য নামে নাই যে, শেখ হাসিনাকে নামিয়ে দেশকে আফগানিস্তান বানাবো। যদি কেউ মনে করে থাকে, তাহলে আমরা বলতে চাই। আমাদের এই দেশ ৭১ সালের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়েছে। আমাদের চিন্তা চেতনা এবং হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হচ্ছে আমাদের গড়ে উঠা। এই দেশে ইসলাম এসেছে সুফিদের মধ্যে দিয়ে। হযরহ শাহ জালার, শাহ পরান, আমানত শাহ’র মাধ্যমে। আপনারা যারা বোমাবাজি করেন, আপনারা যদি সেই সময়ের ভারতবর্ষে থাকতেন তাহলে এই দেশে একজনও মুসলমান হতো না। আপনাদের চেহারা দেখে, কার্যকলাপ দেখে মুসলমান হওয়ার কোন কারণ নাই। সারা বিশ্বে আপনারা ইসলাম ধর্মটাকে বিতর্কিত করেছেন, জঙ্গিদের ধর্ম মধ্যে দিয়ে বিতর্কিত করেছেন। আপনারা ইহুদী এবং অন্যান্য যারা আছে, তারা যে ক্ষতি না করেছে তার চেয়ে বেশী ক্ষতি আপনারা করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা দ্রুত এই হিংস্র ও উগ্রবাদীদের, জঙ্গিদের দমন করার উদ্যোগ গ্রহন করুন। ৫ আগস্টে যে অর্জন আছে সমস্ত কিছু ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি, আমাদের দেশের মানুষ যে নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয় নিয়ে আজকে রাজপথে নেমেছে। আমাদের একাত্তরের স্বপ্নের লালিত বাংলাদেশ শেখ হাসিনা গলা টিপে হত্যা করেছে। মুক্তিযুদ্ধকে শেখ হাসিনা এক চেটিয়া সম্পত্তি মনে করেছে তার নিজের এবং দলের। তেমনি আপনার ওহাবীবাদীরা-মৌলবীবাদীরা ইসলামকে যার এক চেটিয়া সম্পত্তি মনে করেন। তারা শেখ হাসিনার দিকে তাকান, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বেশী বাড়াবাড়ি করবেন না। সমস্ত মতকে ধারণ করা সেই সহনশীলতা নিয়ে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার দিকে অগ্রসর করেন। আমরা কাউকে সেখানে বাধা দিতে চাই না। আমাদের এই দেশে শত শত বছরের সংস্কৃতির ঐতিহ্য বাউলরা রয়েছে, সূফিরা রয়েছে, বিভিন্ন সম্প্রদায় রয়েছে তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে এই দেশ লালনের দেশ, এই দেশে হাছন রাজার দেশ, এই দেশ সকল আউল-বাউল ফকিরের দেশ।
রফিউর রাব্বি বলেন, আপনারা মাজার হলে ভয় দেখাতে চান, কাকে ভয় দেখাবেন। আমরা পাকিস্তানের আমলে এমন বহু ভয় দেখেছি। যারা ভয় দেখাতে চেয়েছে তাদের আমরা সাত সমুদ্র তেরো নদী দিয়ে বিতারিত করেছি। তাদের প্রেতাত্মাদেরও ভয় করি না। আমি স্থানীয় জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনি অনেক কিছুর সংকটের সমাধান করেছেন। স্থানীয় এসব সংকট দূর করতে আপনি যথেষ্ট। আপনি এই সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেন। হতে পারে এটি একটি বিছিন্ন বিষয়, এটি বন্ধ করতে হবে। সকলকে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলাদেশে এটাই আমাদের মূল তাৎপর্য। ভিন্ন মত আমাদের থাকবে, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। সে যে মত বা যে ধর্মেরই হোক তাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। কিন্তু কেউ তার মত চাপিয়ে দিবে এটা আমরা কোন ভাবেই বরদাস্ত করবো না। আমরা উপদেষ্টাদের বলতে চাই, আপনারা বলেছেন কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেন নাই। আপনারা এখনো তাদের গ্রেপ্তার করেন নাই। এদের গ্রেপ্তার করেন। পাগলায় যারা মাজার ভেঙ্গেছে তারা অদৃশ্য নয়, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করেন।
এ সময় নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল হক কাজরের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদত ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দিপু, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা কমিটির সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা,বাসদ সদস্য সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব প্রমুখ।