উন্মুক্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলে জটিল সমীকরণ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: উপজেলা পরিষদে উন্মুক্ত নির্বাচন ঘিরে জটিল সমীকরণে পরেছে নারায়ণগঞ্জের তৃণমূল আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয়ভাবে এ নির্বাচনে কাউকে সমর্থন দিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। তবে স্থানীয়ভাবে অনেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিজস্ব প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। আবার জাতীয় নির্বাচনের পরেই অনুষ্ঠেয় এই ভোটে বড় প্রভাব থাকছে স্থানীয় সংসদ-সদস্যদের। বেশিরভাগ প্রার্থীই চাইছেন এমপির সমর্থন। অনেক জায়গায় এমপিরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের মাঠেও নামিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, তারা চান সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। ফলে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে শিগগিরই দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিলেও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। যাতে করে ভোটের মাঠে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন দলের নেতাকর্মীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নারায়ণগঞ্জের একাধিক উপজেলায় দলের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব, কোন্দল, বিভেদ, বিভাজন।
তৃণমূলের এমন সমস্যার সমাধান না হতেই ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দিয়ে উন্মুক্ত নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ফলে আগ্রহী প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ছাড়াই অংশ নিয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি তেমনটা বলছে না। বরং নির্বাচনকে ঘিরে আবারও মুখোমুখি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গ্রুপ এবং উপ-গ্রুপ।
ইতোমধ্যেই নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের তৃণমূলের রাজনীতি। মাঠে নেমে পড়েছেন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। উঠান বৈঠক, কর্মীসভা, মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তারা। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় এমপির সুদৃষ্টি লাভের দিকে। উন্মুক্ত নির্বাচনে এমপিদের সমর্থন পেলেই নির্বাচিত হওয়া সহজ হবে-এমন ধারণা তাদের। যেই চিন্তা সেই কাজ, হচ্ছেও তেমনটাই।
অন্যদিকে বসে নেই এমপি বিরোধী গ্রুপ। তারাও নিজেদের প্রার্থীদের মাঠে নামিয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে দৃশ্যপটে সামনে আসছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই। এমন প্রেক্ষাপটে উন্মুক্ত নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরাও। দলের হাইকমান্ডরে পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে-নির্বাচনে কোনো ধরনের সংঘাত তারা চান না। কেউ বিশৃঙ্খলা করলেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে আগামী ২১ মে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে মাঠে জোর প্রচারণা চালাচ্ছে প্রার্থীরা। স্থানীয় এমপির সমর্থীত প্রার্থীর পাশাপাশি থেমে নেই নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্য আওয়ামী লীগ নেতারাও।
জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে প্রথমে এমপি পুত্র পাপ্পা গাজী প্রার্থী হলেও পরে সেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন তিনি। পরবর্তীতে এমপির সমর্থন পান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। যাকে বিজয়ী করতে এককাট্টা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এমনকি তার পক্ষে গণসংযোগ করছেন এমপি পুত্র গোলাম মর্তুজা পাপ্পাও। অন্যদিকে নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে জয়ী হতে চান চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভূঁইয়া রানু।
এদিকে, সোনারগাঁয়ে চলছে আরেকটু ভিন্ন চিত্র। তৃণমূলে রয়েছে বিভ্রান্তি, অনেকের মাঝে রয়েছে ক্ষোভ। জানা গেছে, স্থানীয় এমপির সমর্থন পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন বাবুল ওমর বাবু। অন্যদিকে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু। যদিও এবার স্থানীয় এমপির সমর্থনের আশায় ছিলেন রফিকুল ইসলাম নান্নু। তবে, শেষ পর্যন্ত অজানা কোন এক কারণে বাবুল ওমর বাবুরকে সমর্থন পান। গণমাধ্যমে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়া তার প্রতি অন্যায়-অবিচার হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম নান্নু।
এছাড়া, আড়াইহাজারে এমপি সমর্থিত প্রার্থীকে নিয়ে আগে থেকেই নারাজ তৃণমূলের অনেক নেতাকমী। কেননা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপির পক্ষে কাজ করে অনেকেই ছিলেন এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপির সমর্থনের আশায়। এদিকে, তার সমর্থিত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপনকে জেতাতে সরাসরি কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে অন্য প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগও জমা দিয়েছে এক প্রার্থী।