শুক্রবার, জুন ৬, ২০২৫
Led03জেলাজুড়ে

ঈদ-বৃষ্টিতে বাড়তি ভাড়ার খপ্পরে নগরবাসী

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: একদিকে ঈদের আমেজ, আরেকদিকে কিছুক্ষন পরপর বৃষ্টি, এ দু্ই কারণে বাড়তি ভাড়া হাকাচ্ছেন রিকশা, সিএনজি, অটো, লেঙ্গুনা, বাস ও লঞ্চসহ প্রায় সকল ধরনের গণপরিবহনের চালকেরা। ঈদ উপলক্ষে কয়েকজন হাশিমুখে এ ভাড়া মেনে নিলেও বাকি যাত্রিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাড়তি ভাড়া চাওয়ার পিছনেও নানা যুক্তি তুলে ধরেন চালকরা তবে সে যুক্তি মানতে নারাজ যাত্রিরা।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সরেজমিনে নগরীতে দেখা মেলে এমন চিত্রের। সকাল থেকে ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রিচাপ বেড়েছে অন্যান্য গণপরিবহনে। নগরীর অভ্যন্তরীনে রিকশা-অটোর মতো পরিবহরে বাড়তি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে, ২০ টাকার ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রিরা। তবে এ ভাড়া ন্যায্য বলে দাবি করেছেন চালকেরা। তাদের ভাষ্য, খুশি হয়ে ১০ টাকা বেশি দিলে তারাও পরিবারের সাথে হাশিমুখে ঈদ কাটাতে পারবে।

রিকশা চালক করিমউদ্দিন বলেন, ‘সারা বছর চাষাড়া থেকে খানপুরের কথা বইলা নগর খানপুর নিয়ে গিয়ে ২০ টাকা ধরাইয়া দেয়। অনেকে সুগন্ধার সামনে থেকে খানপুর গিয়ে ১৫ টাকা দেয়। এই ভাবেই সংসার চালাইছি। এখন ঈদের সময় সবার ঘড়ে কোরবানি দিতেসে, আমাদের তো কোরবানী দেওয়া সুযোগ নাই, তাও যতটুকু মাংশ পাই সেটা রান্না করতেও তো তেল মসলা লাগবো। মানসের ঘরে গরু রানবো আমার ঘরের পোলাপাইন চাইয়া থাকবো তাই এই ঈদের সময় ৫ বা ১০ টাকা বেশি চাই। এটা কোন অপরাধ করছি?’

অটোচালক সবুজ বলেন, ‘ছোট মাইয়ারে রমজানের ঈদে একটা ড্রেস কিনে দিতে পারসি শুধু। ওর আম্মু আর আমি কিছুই নেই নাই। কোরবানীর ঈদে ড্রেস চায় নাই, চাইছে একটু গরুর মাংশ ভুনা। এই যাত্রিরা খুশি হইয়া বা গালি দিয়া যা দেয় তা দিয়াই আমগো ঈদ। ছোটকালে পড়ালেখা করতে পারি নাই, তাই আজকে ৫ টাকা বেশি চাইলে যাত্রি ঠাপ্পর দেয়। লেখাপড়া কইরা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোটপাট কইরা গত ১৬ বছর যারা নিসে তারা এখন বিদেশে সুখে আছে।’

মিশুক চালক আমজাত বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভাড়া বাড়ানোর কারণ হইলো আমাদের ট্রিপ কম মারতে পারি। সারাদিনে দেখা যায় ৮-১০ টা ট্রিপ মারি, কিন্তু বৃষ্টিটা শুরু হইলেই রাস্তায় সব রিকশাওয়ালা বাইর হয়। জ্যামের কারণে দিনে ৫-৪ টাও যাত্রি নিতে পারি নাই। বৃষ্টির উপর কারো নিয়ন্ত্রন নাই মানি, কিন্তু আমরা তো ভিক্ষা চাইতেসি না। যে ১০ টাকা বেশি চাইছি সেটা এই বৃষ্টির মধ্যে শরীলে জর নিয়া চালাই দেইখা চাইছি।’

যাত্রি কুলসুম বলেন, ‘তারা যে ২০ টাকার বাড়া ৪০ টাকা চায় আমরা যদি দিতে পারতাম তাইলে ভাড়া জিগেস কইরা রিকশায় উঠতাম না। আমাগো
কম বেতনের চাকরি। একমাসে ১০ টাকা বেশি খরচ হইলে পরের মাসে সেই ১০ টাকা ধার নিয়া চলতে হয়। গার্মেন্সে এখনো বেতন দেয় নাই। রিকশা ভাড়া বাচাইতে পায়ে হেটে আসি। যেদিন বৃষ্টি পরে সেদিন রিকশা নিতে হয়, আর সেই দিনই তাদের বেশি ভাড়া দিতে হয়।’

আরেক যাত্রি সাদেক বলেন, ‘সারাবছর ধরেই কিছু না কিছুর দাম বাড়েই। এমনিতে ঈদ আসলে ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা চায়। অন্যদিকে বৃষ্টি হওয়ায় বাড়তি ভাড়া চাওয়া যেন তারা নিয়ম করে রাখসে। আমরা মধ্যবিত্ত মানুষ, শুক্রবার ১০ টাকা দান করতে গেলেও হিসাব করে দিতে হয়। যাদের কাছে ৫০-১০০ টাকা খরচ করতে কিছু আসে যায় না, তারাতো রিকশায় যায় না। তারা চলে প্রাইভেট গাড়িতে।’

RSS
Follow by Email