ঈদ উপলক্ষে জমজমাট ফুটপাতের বেচাকেনা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘বাইছা লন, দেইখ্যা লন, এক দাম, এক রেট ’ এমন সব হাঁকডাকে জমে উঠেছে ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা। হকারদের এই দোকানগুলোতে স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাচ্ছে শার্ট, প্যান্ট পাঞ্জাবি, মেয়েদের ড্রেস থেকে শুরু করে জুতা, স্যান্ডেল, প্রসাধনী এমনকি গহনাও। একদিকে ঈদের বাকি আর হাতে গোনা কয়েকদিন, অন্যদিকে ছুটির দিন হওয়ায় সাধ্যের মধ্যে ভালো পণ্যটি কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন নগরবাসী। মূলত নিম্নআয়ের মানুষরাই ফুটপাতের দোকানের আসল ক্রেতা হলেও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরাও। সব মিলিয়ে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত নিয়ে জমে উঠেছে ফুটপাতের ঈদের কেনাকাটা।
শুক্রবার (১৪ জুন) নগরীর কালিবাজার, চাষাড়া হলিডে মার্কেট, হকার মার্কেট, ২নং গেইটসহ আশেপাশের হকারদের দোকানগুলোতে ঘুড়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। ঈদের কেনাকাটা করতে পরিবারের ছোট-বড় প্রায় সকল সদস্যদের নিয়ে মার্কেটে এসেছেন অনেকেই। ঈদকে কেন্দ্র করে সড়কের দু পাশে ফুটপাতে বসানো হয়েছে অনেক দোকান। কিছু কিছু দোকান বসানো হয়েছে রাস্তার ওপরই। মাঝে মাঝে পুলিশ এসে ধাওয়া দিলেও, তারা চলে যাওয়ার পরই আবারও পসরা সাজিয়ে বসেছে হকাররা।
হকারদের এই দোকানগুলো ঘুরে জানা যায়, এখানে শিশুদের জন্য ডেনিম (জিন্স) প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা, অন্য সুতি কাপরের প্যান্ট ৩০ থেকে ৬০, প্যান্ট ও গেঞ্জির সেট ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। শিশুদের ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, ওয়ান পিস ১৫০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। মেয়েদের থ্রি-পিস ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, টপস ও ওয়ান পিস ২৫০ থেকে ৩৫০, পার্টি ড্রেস ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০, স্যান্ডেল ও জুতা ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। চেলেদের বিভিন্ন রকমের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, ডেনিম প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায়, স্টিস (স্ট্রেচেবল) প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ছেলেদের মানিব্যাগ, বেল্ট, চশমা, ঘড়ি, মেয়েদের কসমেটিকস্ সহ নানান কিছু বিক্রি হচ্ছে।
এসময় ফুটপাতের ব্যবসায়ী আশিক মিয়া বলেন, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সব ধরনের লোকেরাই কেনাকাটার জন্য আসেন। যাদের বাজেট কম তারা তো আর এসি দোকানে গিয়ে ৪ হাজার টাকার প্যান্ট কিনবে না। বাজেটের মধ্যে যার যা পছন্দ হয় তারা আমাদের কাছে থেকে কিনে নেয়। আর মার্কেট বা বিভিন্ন শোরুমের মতই নানা ডিজাইন ও রঙের ড্রেসের কালেকশন আছে আমাদের কাছে। তাই যারা শুধু দেখতে আসে তাদেরও কিছু না কিছু পছন্দ হয় আর কিনে নিয়ে যায়। এখন বেচাকেনা একটু চলছে। যেহেতু ঈদের বাকি হাতে আরও ২ দিন, হয়তো চাদঁরাতে বেচাকেনা আরও বাড়বে।
আরেকজন বিক্রেতা ফজল বলেন, হকারদের থেকে মানুষ কেনাটাকা করে কারণ এখানে দামটা একটু কম, বিভিন্ন মার্কেটে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। মেয়েদের ড্রেস, শিশুদের পোশাক, প্রসাধনী, পুরুষদের পোশাক যেমন- জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, ট্রাউজার, জুতা, বেল্ট, ক্যাপ, লুঙ্গি, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী এখানে পাওয়া যায়। ঈদ উপলক্ষ্যে এমনি প্রতিটা জিনিসের দাম একটু বেশি। তারপরও মার্কেটের তুলনায় এখানে জিনিসের দাম অনেক কম। যাদের সামর্থ একটু কম তারাই এখানে আসে। কিছুদিন আগে বেচা-বিক্রি কম থাকলেও এখন মোটামুটি হচ্ছে। ঈদের জন্য বিভিন্ন ড্রেস কালেকশন এনেছি। আমাদের তো এ সময়টাতেই একটু আয় বেশি হয়। কিন্তু হটাৎ পুলিশ এসে উঠিয়ে দেয়। এখন আমাদের কর্ম এটা, আমার পরিবার চলে এটি দিয়ে। তাই পুলিশের দাওয়া, মার খেয়েও আামাদের বেচা কেনা করতে হয়। এই বেচা কেনায় যে আমাদের লাভ হচ্ছে এমনটা না, কম দামে কিছু জিনিস কিনে ২ টা পরিবার ও ঈদ করতে পারবে।
২ মেয়ের জন্য কেনাকাটা করতে রফিক হাওলাদার জানান, মার্কেটের দোকানে যে কোন কিছুই এবার অতিরিক্ত দামে সব বিক্রি হচ্ছে। মেয়ের জন্য আমি আর আমার স্ত্রী মিলে ২ টা ড্রেস পছন্দ করেছিলাম, কিন্তু মার্কেটের দেকানদার সেই ড্রেসের দাম বলে ৪ হাজার টাকা। এখানে এসে দেখি একই ধরনে ড্রেস আমি আর কমে পাচ্ছি। আমার বাজেট একটু কম, যাতে ঘরের সবার জন্য নিতে পারি তাই এবার ফুটপাত থেকেই সব কেনাকাটা করলাম। অন্যান্যবার দুয়েকটা মার্কেট থেকে ড্রেস কিনেছিলাম, তবে পরিবারের সবার জন্য নিতে পারি নি।
আরেকজন ক্রেতা রেহেনা খাতুন বলেন, প্রতিবার ঈদের কেনাকাটা আমরা ফুটপাত থেকেই করি। বাসায় ছোট ছেলে মেয়ে এবং শ্বশুর শাশুড়ি আছেন। সবার জন্যই কেনাকাটা করতে হয়, তাই ফুটপাত ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না। তবে এবার কেনাকাটা করতে এসে দেখছি গতবারের তুলনায় সবকিছুর দাম বাড়তি। বাচ্চার আব্বুর জন্য যে ধরনের পাঞ্জাবি আগে ৩০০ টাকা দিয়ে কিনেছি, সেগুলোর দাম এবার ৫০০ টাকার ওপরে। একইভাবে অন্যান্য সব কিছুর দামি এবার বাড়তি। যে কারণে এক ঘণ্টা ধরে ঘুরেও এখনো কিছু কিনতে পারিনি।