রবিবার, জুন ১, ২০২৫
রাজনীতি

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাসসহ নানা দাবিতে নগরীতে মানববন্ধণ

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ, সেলিম মাহমুদ ও সীমা আক্তারসহ নেতৃবৃন্দের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৩০ মে) বিকাল ৫ টায় ২ নং রেল গেইটে জেলা সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় জেলা সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আবু নাঈম খান বি প্লবের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, জেলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি সেলিম মাহমুদ, জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সহসাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সোহাগ, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জামাল হোসেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ক্রমাগত নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শ্রমজীবী মানুষের জীবন দুর্বিষহ। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ ঈদ আসলেই কেবল ভাবতে পারে পরিবার পরিজনের জন্য কিছু ভাল খাবার ও কিছু জামা কাপড় কেনার। এমনিতেই শ্রমিকের মজুরি কম। তাই শ্রমিকরা ঈদের আগে অতিরিক্ত কাজ করে তাদের আয় বাড়ানোর জন্য। কিন্তু মালিকরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে কারখানাগুলোতে সংকট তৈরি করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসিকের সমান বোনাস দেয়া হয়। অথচ যাদের উৎপাদনের কারণে দেশে বৈদেশিক মূদ্রা আসে তাদের ঠিকমতো বোনাস দেয়া হয় না। কিছু বড় ফ্যাক্টরি বাদে অন্যান্য কারখানায় শ্রমিকদের বেসিকের অর্ধেক বোনাস দেয়, কোথাও বোনাস না দিয়ে বকশিশ দেয়। সরকার মে মাসের মধ্যে বোনাস পরিশোধের নির্দেশ দিলেও এখনও অনেক গার্মেন্টসে বোনাস দেয়া হয়নি। বোনাস নিয়ে সংকট নিরসন করতে আইন করে শ্রমিকদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পূর্ণ বোনাস দিতে হবে। ৭ জুন ঈদ উল আযহা। ঈদের আগে শ্রমিকের মে মাসের পূর্ণ বেতন পাওয়া ন্যায্য। ঈদের আগে বেতন পরিশোধে সরকারি নির্দেশনা আছে। তাই বেতন-বোনাস নিয়ে যে কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। বেতন বোনাস নিয়ে মালিকদের গড়িমসির কারণে শিল্প এলাকায় যদি শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হয় তার জন্য মালিক ও প্রশাসন দায়ী থাকবে।

তারা আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে এবারও গত অথর্ বছরের মতো প্রায় আট লক্ষ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা হবে। গত বাজেটে আমরা দেখেছি অনেক বড় বাজেট হলেও শ্রমিকের জন্য বাজেটে তেমন কিছু ছিল না। বছর বছর বাজেটের অবয়ব বাড়ছে, বাড়তি বাজেটের অর্থের জোগান দিতে বাড়ছে কর, বাড়ছে ঋণ, ঘটছে মুদ্রাস্ফীতি, বাড়ছে আয় বৈষম্য। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে পিষ্ঠ হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ কিন্তু রাষ্ট্রের বাজেটে শ্রমিকের উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে না, দিচ্ছে না কাজের নিশ্চয়তা। নেতৃবৃন্দ আসন্ন বাজেটে শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তায় রেশন, স্বল্প ব্যয়ে আবাসন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাজেটে বিশেষ থোক বরাদ্দ দেওয়ার জোর দাবি জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে কথা বলায় গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ কারখানার শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে। চট্টগ্রামে ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকের পক্ষে কথা বলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা বাসদ ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলা সভাপতি মিরাজউদ্দিন ও রিকশা শ্রমিকনেতা রোকনকে। ১৯৭৪ সালের কালো আইন বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যেক সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে ব্যবহার করে। প্রত্যেক গণআন্দোলনে এ কালো আইন বাতিলের দাবি উঠেছে। অথচ ২৪এর গণঅভ্যূত্থানের পরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রমিক আন্দোলন দমনে এ আইন ব্যবহার কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল এবং সেলিম মাহমুদ, আল কাদেরী জয়, মিরাজউদ্দিন, সীমা আক্তার, রোকনসহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়ের করা সকল মামলা অবিলম্বে প্রতাহারের দাবি জানান।

RSS
Follow by Email