ইতিহাসের পাতায় আজ যা যা ঘটেছিল..
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সমগ্র বিশ্ব ইতিহাসের সোনালী পাতায় আজকের দিনটি কোন না কোন ভাবে স্বরণীয় হয়ে থাকে। কোথাও কোন আবিষ্কার বা কারো জন্ম আবার কারো মৃত্যু। কোথাও বা যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় এই দিনে। চলুন যেনে নেই আজ বৃহস্পতিবার ( ৭ডিসেম্বর) ইতিহাসের পাতায় কোথায় কি স্বরণীয় হয়ে ছিলো।
সাল ১৭৮২:- টিপু সুলতান ভারতের মহীশূরের রাজা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ। ৭ ডিসেম্বর এই দিনে টিপু সুলতান বা ফতেহ আলী সাহাব টিপু ভারতের মহীশূরের রাজা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। তার জন্ম ২০ নভেম্বর, ১৭৫০ সালে। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেন। তিনি তার শৌর্যবীর্যের কারণে শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর শাসনকালে একটি নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা এবং ক্যালেন্ডার সহ বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। । পাশাপাশি একটি নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা যা মহীশূরের রেশম শিল্পের বিকাশের সূচনা করেছিল। শের-ই-মহীশূর খ্যাতো এই রাজার মৃত্যু হয় ৪ মে, ১৭৯৯ সালে।
সাল ১৮৫৬ – ৭ ডিসেম্বর এই দিনে রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উপস্থিতিতে প্রথম বিধবা বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
নিজের শিশুকন্যার বালবৈধব্য ঘোচাতে রাজা রাজবল্লভ অনেক কাল আগে বিধবাবিবাহ প্রচলনে উদ্যোগী হয়েছিলেন, কিন্তু নবদ্বীপের পণ্ডিতসমাজের বিরোধিতায় তা বানচাল হয়ে যায়। স্বামি মারা যাওয়া পরে স্ত্রী আবার বিবাহ দেয়ার রীতি হল বিধবাবিবাহ । এরপর দ্য হিন্দু উইডো’স রিম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৮৫৬ আইনটি ২৬ জুলাই ১৮৫৬ এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীন সময়ে তখনকার ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সহায়তায় ভারতবর্ষের সকল বিচারব্যবস্থায় হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ বৈধ করা হয়েছিল। বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং আইন প্রণয়ন করে বিধবা বিবাহ কে আইনি স্বীকৃতি দেন।
সাল ১৮৮৯ – পৃথিবীর প্রথম অটোমোবাইল তৈরি। ৭ ডিসেম্বর এই দিনে গটলিয়েব ডাইমলের ও কার্ল বেঞ্জ তরল পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিন ব্যবহার করে প্রথম মোটরগাড়ি তৈরি করেন।
সাল ১৯১৭ – মার্কিন সরকার অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। যুক্তরাষ্ট্র ডিসেম্বরে এই দিনে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরীর বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করে। “বৈদেশিক জটিলতা” এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগী শক্তি হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেয়, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের মিত্র হিসেবে নয়। যদিও অটোম্যান সাম্রাজ্য এবং বুলগেরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলো, তাদের কেউই কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।
সাল ১৯৪১ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জাপান কর্তৃক পার্ল হারবার আক্রমণ।
পার্ল হারবার আক্রমণ ছিল ইতিহাসের একটি অপ্রত্যাশিত সামরিক অভিযান যা জাপান সাম্রাজ্যের নৌবাহিনী কর্তৃক ৭ ডিসেম্বর, ভোরে (জাপানের সময়: ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪১) হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও নৌ-ঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালিত হয় । ৬টি বিমানবাহী জাহাজ থেকে ৩৫৩টি জাপানি যুদ্ধ বিমান, বোমারু বিমান এবং টর্পেডো বিমান নৌ-ঘাঁটিটিতে একযোগে আক্রমণ করে। চারটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ তাৎক্ষণিকভাবে ডুবে যায়। এছাড়াও অন্য চারটি যুদ্ধজাহাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডুবে যাওয়া যুদ্ধজাহাজগুলোর মধ্যে দুটিকে উদ্ধার করে পরবর্তীতে বিশ্বযুদ্ধের কাজে লাগানো হয়। জাপান পরিচালিত এ বিমান আক্রমণে ১৮৮টি মার্কিন বিমান ধ্বংস হয়। নিহত হয় ২,৪০২ জন এবং আহত বা ঘায়েল হয় ১,২৮২ জন।
সাল ১৯৭০ – সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ ।
ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭০ সনে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সনের অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বন্যার কারণে ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। নির্বাচনে মোট ২৪ টি দল অংশ নেয়। ৩০০ টি আসনে ১,৫৭৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করে। আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে ১৬২টি আসন পূর্ব পাকিস্তানে এবং অবশিষ্টগুলি পশ্চিম পাকিস্তানে। নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং প্রায় ৬৫% ভোট পড়েছে বলে সরকার দাবী করে। এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
সাল ১৯৭১ -মুক্তি যুদ্ধের পর বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভুটান।
১৯৭১ সালের এদিনটি ছিলো মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এদিন সকালে ভুটানের তৎকালীন রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানিয়ে তারবার্তা দেন। সেখানে রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক বলেন, বিদেশি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের মহান এবং বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম অদূর ভবিষ্যতে সাফল্য লাভ করবে। ভুটানের জনগণ এবং তার প্রত্যাশা, সৃষ্টিকর্তা বর্তমান বিপদ থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করবেন, যেন তিনি দেশের পুনর্গঠন এবং উন্নয়নের মহান কর্তব্যে দেশ ও দেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
সাল ১৯৭২ – চাঁদে অ্যাপোলোর শেষ অভিযান অ্যাপোলো-১৭ এর যাত্রা শুরু।
অ্যাপোলো ১৭ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো স্পেস প্রোগ্রামের একাদশ এবং চূড়ান্ত মানব মহাকাশ যাত্রা। ১৯৭২ সালের ৭ই ডিসেম্বর ১২ ৩৩-est চালু একটি তিন সদস্য ক্রু কমান্ডার ইউজিন Cernan, কমান্ড মডিউল পাইলট রোনাল্ড ইভান্স, এবং লুনার মডিউল পাইলট হ্যারিসন Schmitt গঠিত, অ্যাপোলো ১৭ অবশেষ সাম্প্রতিকতম মানব চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ এবং সাম্প্রতিকতম নিম্ন পার্থিব কক্ষপথ অতিক্রম মানব ফ্লাইট। এদিনে চাঁদে অ্যাপোলোর শেষ অভিযান অ্যাপোলো-১৭ এর যাত্রা শুরু করে।
এছাড়া এদিনে কিছু বিশেষ দিবস পালিত হয়।
ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর পতাকা দিবস । বীর সেনানীদের শৌর্য ও সাহসিকতা এবং শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সশস্ত্র বাহিনী পতাকা দিবস পালন করা হয়। ১৯৪৯ সাল থেকে প্রতি বছর ৭ ডিসেম্বর এই দিনটি পালিত হয়।
আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান পরিবহন দিবস। ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গৃহীত এক সিদ্ধান্তে সদস্য দেশগুলোকে প্রতিবছর ৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস পালনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
এ দিনে সনামধন্য কিছু ব্যক্তির জন্মদিন রয়েছে যেমন,
সাল ১৮৭৯ – বাঘা যতীন, বাঙালি বিপ্লবী।
সাল ১৮৯৩ – ফে বেইন্টার, মার্কিন চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেত্রী।
সাল ১৯২৮ – নোম চম্স্কি, মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী ও দার্শনিক।
সাল ১৯৩৩ – মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়,শঙ্কর নামে বহু পরিচিত বাঙালি সাহিত্যিক।
সাল ১৯৫৭ – জিওফ লসন, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ও পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ।
সাল ১৯৬০ – আবদুল্লাতিফ কাশিশ, তিউনিসীয়-ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার।
সাল ১৯৭০ – কোর্টনি ব্রাউন, বার্বাডীয় ক্রিকেটার।
সাল ১৯৮৮ – এমিলি ব্রাউনিং, অস্ট্রেলীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, গায়িকা ও মডেল।
সাল ১৯৮৯ – নিকোলাস হল্ট, ইংরেজ অভিনেতা।
সাল ১৯৯১ – অ্যানিয়া শ্রাবসোল, ইংরেজ প্রমীলা ক্রিকেটার।
এদিনে ইতিহাসের পাতায় সনামধন্য কিছু ব্যক্তির মৃত্যু উল্লেখিত আছে। তারা হলেন
সাল ১৭৮২ – মহীশুরের বীর যোদ্ধা হায়দার আলী।
সাল ১৯৭০ – রুব গোল্ডবার্গ, মার্কিন কার্টুনিস্ট, স্থপতি, লেখক, প্রকৌশলী ও আবিষ্কারক।
সাল ১৯৯১ – আতাউর রহমান খান, বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং লেখক।
সাল ২০১৪ – খলিল উল্লাহ খান, বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেতা।
সাল ২০২০ – জারওয়ালি খান, পাকিস্তানি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত।