ইসলামী ব্যাংকের অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণের সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ব্যাংকটির গ্রাহক ও চাকরিপ্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ইসলামী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখা এবং নিতাইগঞ্জ শাখার সামনে দুটি আলাদা গ্রুপে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে ব্যাংকটির পর্ষদ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বহু কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছিল। বক্তারা অভিযোগ করেন, ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক দখলের পর শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলা থেকেই বিভিন্ন পদমর্যাদায় ৭,২২৪ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে ৪,৫০০ জনেরও বেশি কর্মী শুধু পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, দেশের বাকি ৬৩টি জেলার চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত করে একটি বিশেষ জেলার প্রার্থীদের গোপনে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকের শৃঙ্খলা চরমভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, গত সাত বছরে নিয়োগ পাওয়া প্রায় ১০ হাজার কর্মীর বড় একটি অংশকে কোনো ধরনের সার্কুলার বা পরীক্ষা ছাড়াই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, এমনকি ভুয়া তথ্য ও জাল সনদ ব্যবহার করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
বক্তারা জানান, সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকখাতে সংস্কার শুরু হলে ব্যাংকটির বর্তমান পর্ষদ সম্প্রতি ৫ হাজারের বেশি কর্মকর্তার জন্য একটি বিশেষ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বেশিরভাগ অভিযুক্ত কর্মকর্তা এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা ও ব্যাংকের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। তারই প্রতিবাদে গ্রাহকরা শান্তিপূর্ণভাবে এই মানববন্ধন করছেন।
ব্যাংকের গ্রাহক আব্দুল বাতেন বলেন, “ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের সময় জাল-জালিয়াতি করে তাদের নিজেদের কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অনিয়ম ও হাজার হাজার টাকা পাচার হওয়ার কারণে ব্যাংকটির অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হয়। যারা অবৈধ নিয়োগ পেয়েছিল তাদের পরীক্ষার আয়োজন করলেও বেশিরভাগ অংশগ্রহণ না করে নানা রকম অপপ্রচার চালিয়েছিল। ব্যাংকটির স্বার্থে যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি ও পাশ করতে পারেনি, সেই অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের বহিষ্কার করতে হবে।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গ্রাহক মোঃ আনিস উজ্জামান, মাওলানা আনোয়ার হোসেন, রমযান আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ব্যাংকটি থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে, যার ফলে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সময়ে চট্টগ্রামভিত্তিক বহু ব্যক্তিকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। চলতি বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিলে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং ব্যাংকখাতে সংস্কার শুরু হয়। এর অংশ হিসেবেই বর্তমান পর্ষদ বিশেষ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়।