সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
Led01জেলাজুড়েধর্মসদর

ইফতার বাজারে অতিরিক্ত দাম, তবুও বেচাকেনার হিড়িক

#মধ্যেবিত্ত মানুষ ইফতার কিনে খাওয়ার পরিস্থিতিতে নাই
#অধিকাংশ রেস্তোরায় অস্বাস্থ্যকর তেল দিয়ে খাবার তৈরী করছে
#প্রশাসনের বিশেষ নজর দেয়ার অনুরোধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নতুন এক সূর্যাস্ত দিয়ে মুসলমান ধমালম্বিদের প্রথম রোজা সম্পন্ন হলো। সকাল থেকে নগরীতে মানুষের আনাগোনা কম থাকলেও দুপুর গড়িয়ে বিকেলের হাতছানি দিতেই জনসমাগম। বিশেষ করে বাজার, ফলের দোকান ও ইফতারের দোকান গুলোতে বেশী ভির লক্ষ করা যায়। এছাড়া নগরের অলিগলি থেকে অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্টে বসেছে জিলাপি, ছোলা, পেঁয়াজু কাবাবসহ নানা চমকপ্রদ ও স্বাদের খাবারের পসরা। প্রথম রোজায় একটু আগেভাবেই ইফতার জন্য পছন্দের খাবার কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন রোজাদারেরা।

নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে চাষাঢ়া থেকে শুরু করে মন্ডলপাড়া পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে নানান মুখোরোচক খাবারের পদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিকেল গড়াতেই বেচাকেনা শুরু হয়ে ইফতারের আগ পর্যন্ত চলেছে। নারায়ণগঞ্জে ফুটপাত দখল মুক্ত হওয়ায় অনেকেই মেয়র এমপিদের প্রশংসা করছেন। তবে এসব ফুটপাত খালি থাকলে বিভিন্ন রেস্তোরা গুলো ফুটপাতের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে।

রোজার প্রথম দিকে সাধারণত বাসাবাড়িতে ইফতার আয়োজন থাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভিড় থাকে কম। কিন্তু এবার নারায়ণগঞ্জে সে দৃশ্যপট ভিন্ন। রোজার প্রথম দিন থেকেই রমরমা নগরের ইফতার বাজার। ইফতারের জন্য পছন্দের আইটেমটি নিতে রোজাদারদের দীর্ঘ সারি প্রত্যক্ষ করা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতে। রেস্টুরেন্ট ছাড়াও শহরের আনাচে-কানাচে দোকান ও ফুটপাতে ইফতার বিকিকিনিও বেশ চাঙ্গা।

এসব ইফতারে মধ্যে রয়েছে খাশির রান, গ্রিল চিকেন, বুন্দিয়া, গরুর কালো ভুনা, কাচ্চি, মগজ ভুনা, চিংড়ি বল, পরোটা, লুচি, চিকেন তান্দুরি, চিকেন বটি কবাব, দই চিড়া রেশমি জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, রেশমি কাবাব। এছাড়া রয়েছে আলুর চপ, বেগুনের চপ, ছোলা, পেঁয়াজু। তবে এবস খাবারের মধ্যে তেলের ভাজা বিভিন্ন আইটেমের চপের চাহিদা তুলনা মূলক বেশী। পানীয় মধ্যে রয়েছে আখের শরবত, পেস্তা বাদাম শরবত, বেলের শরবত, তরমুজের শরবত, লেবুর শরবত, বিভিন্ন ফলের আইটেম থেকে তৈরী শরবতসহ অসংখ্য পানীয়র আয়োজন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতার হই-হুল্লোড়ে মুখরিত পুরো ইফতার বাজার। চলছে বেচাকেনাও। এখানকার অস্থায়ী দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে সুতি কাবাব, জালি কাবাব, টিক্কাসহ প্রায় ১০-১৫ ধরনের কাবার। কাবাবের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে ডিম চপ, পিয়াজু, চুলা কাবাবসহ বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী। মিষ্টির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে শাহী জিলাপি, মিষ্টি, দইসহ নানা কিছু। এছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি অলিগলিতেও বসেছে অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকানও। সেসব দোকানে ছোলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ডিম চপ, দই বড়া, ডাবলির ঘুঘনি, মিষ্টি, শাহী হালিম, গরু-মুরগি-খাসির হালিম, কাবাব, সবজি পাকোড়া, মাংসের চপের পাশাপাশি অনেকে তাদের নিজস্ব বিশেষ আয়োজন নিয়ে বসেছেন।

বিগত বছরের তুলনায় এবছর মোটামুটি সব ধরণের খাবারের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। নিন্মবিত্ত ও মধ্যেবিত্তদের অনেকটা নাগালের বাহিরে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক ক্রেতা।

দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা মো. সিয়াম আহম্মেদ লিয়ন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এবার প্রথম রোজায় ভেজাল না করে, বাহির থেকে ইফতার কিনতে আসছিলাম। কিন্তু এবার ইফতারের এতো দাম যে, মনের মতো কেনাকাটা করতে পারলাম না। অনেক কিছুই বাজেটের মধ্যে থেকে বাদ দিতে হয়েছে। মধ্যেবিত্ত মানুষ এবার ইফতার কিনে খাওয়ার পরিস্থিতিতে নাই।

গলাচিপার এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. জুয়েল মিয়া জানায়, প্রথম রোজায় বাসায় কোন আয়োজন ছিলো না। দোকান বন্ধ করে বাহির থেকে ইফতার কিনে প্রথম রোজায় পরিবারের সাথে ইফতার করবো। কিন্তু বাহিরে ইফতার আইটেমের এতো দাম যে কিনে খাওয়ার মতো না। তাছাড়া অধিকাংশ রেস্তোরায় অস্বাস্থ্যকর তেল দিয়ে খাবার তৈরী করছে এতে করে এসব খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হবে। প্রশাসনের বিশেষ নজর দেয়ার জন্য অনুরোধ করবো।

একটি কর্পোরেট হাউজে চাকরি করেন সোহেল তাজ। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, প্রথম রমজানের ইফতার করবো পরিবারের সঙ্গে। তাই একটু আগেভাগেই বাসায় বাসায় ফিরছি। বঙ্গবন্ধু সড়কে কালীর বাজার এলাকায় ইফতার কিনতে এসেছেন তিনি। তবে এবারের ইফতারির আইটেমগুলোর দাম একটু বেশি বলে মনে করছেন সোহেল। এরপরেও হরেক রকম খাবার কিনেছেন তিনি।

রোজার প্রথম দিনে ফলের প্রতিও মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। দুপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে নগরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হতে দেখা যায় কলা, বাঙ্গি, তরমুজ, আনারস, আপেল, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ধরনের খেজুর। ইফতারে খেজুর ও ফলের চাহিদা বেশি থাকায় নগরীর চাষাঢ়া, কালীর বাজার, ২নং রেলগেইট এলাকায় এসব ফলের দোকানে বেশি ভিড় দেখা যায়।

RSS
Follow by Email