ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হওয়া মানে মৃত্যু, পরিনতি দেখছি ‘জেল-জুলুম’: মোহাম্মদ হাতেম
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: তৈরি পোশাক রপ্তানির উপর এনবিআর এর ১ শতাংশ ট্যাক্স চরম অন্যায় বলে মন্তব্য করেছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেছেন, এত সংকটের মধ্যেও এনবিআর আমাদের কাছে থেকে ১শতাংশ করে ট্যাক্স কেটে নিচ্ছে। যেটাকে ফেরত অথবা সমন্বয়ের কোন ব্যবস্থা রাখেনি। আমার মোট রপ্তানির মুল্যের উপরে ১ শতাংশ ট্যাক্স নিয়ে যাওয়া, এটা চরম অন্যায়। এভাবে এই ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় ১ শতাংশ এআইটি কেটে নেওয়া বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু না।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে যেই ট্রেডে রয়েছি, এটা ওয়ান ওয়ে রোড। এখান থেকে ফেরা সম্ভব না। আমার ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে মৃত্যু, ওই মৃত্যু পর্যন্ত আমাকে যেতে হবে। এক সময় গিয়ে জেল-জুলুম পোহাতে হবে। সামনে পরিনতি দাঁড়াবে এটাই, এটা ছাড়া আমি আর কোন পরিনতি দেখছি না।
বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এইসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানিতে প্রণোদনা আমাদের প্রয়োজন কারণ, লোকাল যে স্পিনিং মিল গুলো রয়েছে, সেটিকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এটা না বাঁচালে আমাদের রিজার্ভ কমে যাবে। পোশাক খাতটা একটি আমদানি নির্ভর রপ্তানি শিল্পে পরিণত হবে। দেশে স্বার্থে চিন্তা করলে এই লোকাল স্পিনিং মিল বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। আর যদি আমি নিজের ব্যবসার কথা চিন্তা করি, তাহলে আমি ভারত থেকে সুতা কিনেও চলতে পারবো। এখন সরকার কি এটা চায়।
তিনি বলেন, আমি যতটুকু রপ্তানি আদেশ পাচ্ছি, সেটি আবার সময় মতো আমি দিতে পারছি না। কারণ গত ২/৩ বছরে গ্যাস সংকট অনেক গুন বেড়েছে। এখন দিন-রাত কখনো আমরা গ্যাস পাচ্ছি না। এদিক, বিদ্যুতের দাম, ব্যাংকের ইন্টারেস্ট বেড়ে গেছে। আমার যেসকল জোগান গুলা রয়েছে, সব কিছুতে আমার অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে। আবার আমার শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সব কিছু যখন বাড়লো, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে আমি কম্পিটিটিভনেস টা ধরে রাখতে পারছি না। একারণে আমি প্রতি বছর লস করছি। কোথাও কোন ভালো সংবাদ নেই।
এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, রপ্তানিকারকদের জন্য যে নগদ সহায়তাযে থাকবে না, সেটা আমরা জানি এবং এর জন্য আমরা মানসিক ভাবেও প্রস্তত। ডাব্লু-টি-ও’র নিয়ম অনুযায়ী আমরা ২০২৯সাল পর্যন্ত এই সুবিধাটা পেতে পারি। কিন্তু তখন পর্যন্ত আমরা এটা নিবো না। কথা হলো এখনই কেন এটা বন্ধ করার পায়তারা শুরু হলো। এখন যেটা দেওয়া হচ্ছে, সেটা নিতেই আমরা অনেকে ইচ্ছুক না। রপ্তানির এত সময় পর এই টাকা পাওয়ার চেয়ে না পাওয়াই ভালো। যোরা এই পলিসিটা করেছেন, আমি জানি না যে তারা বাস্তবতাটা আমলে নিয়েছেন কিনা। দেশের সুতার মিল যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাকে অন্য দেশ থেকে তা আমদানি করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের থেকে ৫/১০ সেন্ট বেশি হলেও আমরা কিন্তু দেশের বাজার থেকে সুতা নিবো। তবে, এর বেশি হলে কিন্তু আমরা নিবো না। কেন তারা আমাদের কম দামে সুতা দিতে পারছে না? কেননা ভারত-চীনের নিজস্ব কটন রয়েছে, যা বাংলাদেশের নাই। পুরোটাই আমদানী নির্ভর। এক্ষেত্রে সুতা উৎপাদনে খরচও বেশি হয়।
তিনি বলেন, অনেকে বলেছেন, আমরা গার্মেন্ট পন্য রপ্তানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার করি। টাকা না আনা মানেই তো পাচার। যারা পলিসি তৈরি করেন, তাদের কাছে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যংককে ধন্যবাদ যে, ওনারা রপ্তানির সঠিক পরিমানটা সামনে এনেছেন। তাদের এই রপ্তানির হিসাবটা আমাদের সাথে মিলে। তবে, এটা আরও যাচাই বাছাই এর প্রয়োজন।