অর্থের অভাবে থামছে স্বপ্ন, ডিসির তাৎক্ষণিক সহায়তায় পেল অসহায় মা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: একদিকে দৃষ্টিশক্তি হারানোর বেদনা, অন্যদিকে বিদেশে চিকিৎসার বিপুল খরচ জোগাড় করার দুশ্চিন্তা—এই দুইয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে অবশেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার দ্বারস্থ হলেন ফতুল্লার এক অসহায় মা। দীর্ঘদিন ধরে প্রায় দৃষ্টিহীন কিশোরী মেয়ে হাকিমা আক্তার আলভীর চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে, ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তার কাছে এসে তিনি পেলেন তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা ও সাহসের বার্তা।
ফতুল্লার দেওভোগ এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিক আজিজুল হক ও গৃহিণী রাশেদা বেগমের মেয়ে আলভী দীর্ঘদিন ধরে চোখে দেখতে পাচ্ছে না। পাঁচজনের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম আজিজুল হকের অল্প বেতনে সংসার চালানোই কঠিন। তবুও ধার-দেনা ও আত্মীয়স্বজনের সাহায্যে বাবা-মা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছেন, কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি।
চিকিৎসকরা আলভীকে দ্রুত ভারতের শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্টে ভারতের ভিসা সংগ্রহ করলেও, বিদেশে চিকিৎসার বিপুল খরচ জোগাড় করতে পারেননি।
দীর্ঘদিন ধরে দৃষ্টিহীন মেয়েকে নিয়ে হতাশায় ভুগতে থাকা রাশেদা বেগম অবশেষে সোমবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সঙ্গে দেখা করেন। জেলার এই অভিভাবক মনোযোগ সহকারে অসহায় মায়ের কষ্টের গল্প শোনেন। তিনি রাশেদাকে সান্ত্বনা দিয়ে হতাশা কাটিয়ে উঠতে পরামর্শ দেন এবং আলভীর চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
অনুদান পেয়ে আবেগাপ্লুত রাশেদা বেগম বলেন: “আমি মেয়ের চিকিৎসার জন্য অনেকের কাছে গিয়েছি, কেউ পাশে দাঁড়াননি। কিন্তু ডিসি স্যার আমার কথা শোনামাত্রই অনুদানের চেক দিলেন। পরিমাণে ছোট হলেও এই সহায়তা আমাদের জন্য অনেক বড় সাহসের।”
তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “নারায়ণগঞ্জের স্বচ্ছল মানুষরা যদি মাত্র ১০০ টাকা করে দেন, তবে আমার মেয়ের চিকিৎসার সব খরচ উঠে যাবে।” রাশেদা বেগম আরও জানান, তার মেয়ের স্বপ্ন—চোখ ফিরে পেয়ে পড়ালেখা করে একদিন ডাক্তার হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এ বিষয়ে বলেন, “সীমিত বাজেটের কারণে একজনকে খুব বেশি সহায়তা করা সম্ভব নয়। তবে প্রায়ই এমন অসহায় মানুষ আমার কাছে আসেন। জেলার অভিভাবক হিসেবে আমি চেষ্টা করি, অল্প হলেও সবার পাশে দাঁড়াতে।”
তিনি হাকিমা আক্তার আলভীর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয় মানুষদের মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জোর আহ্বান জানিয়েছেন।