অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক প্রস্তুতি
#একুশে ফেব্রুয়ারিকে বুকে ধারণ করতে হবে বাংলা ভাষার সঠিক উচ্চারণ ও ব্যবহারের মধ্য দিয়ে: ডিসি
# সারা নারায়ণগঞ্জ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা: এসপি
# ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এ আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত: শিল্পি
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: আর মাত্র কয়েক ঘন্টা, এরপর দলে দলে অমর ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে নারায়ণগঞ্জবাসী। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। ক্যানভাস দিয়ে লাল-সাদা-কালো রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নানা আল্পনা। এই আল্পনায় সেজেছে শহীদ মিনার, পিচঢালা সড়ক ও বিভিন্ন আশে পাশের দেয়াল। বাদ যায়নি শহীদ মিনারের গাছগুলো। গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে অ-আ-ক-খ বর্ণমালা। এক কথায় বলা যায়, আল্পনায় ও বর্ণমালায় সেজে উঠছে শহীদ মিনার এলাকা। এদিকে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন ফুল ব্যবসায়ীরা, ইতিমধ্যে নগরীতে বসেছে খন্ড খন্ড ফুলের বাজারও। গোলাপ, জবা, গাদা, রজনীগন্ধা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন বুকে, মালা ও ফুলের তোড়া। বিভিন্ন ব্যাক্তি-সংগঠন-প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অর্ডার সম্পূর্ন করতে হবে আজ রাতেই। সার্বিক নিরাপত্তায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দেখা গেছে পুলিশের উপস্থিতিও।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সরেজমনে নগরজুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। শহীদ মিনারের পর আল্পনায় সাজানো হয়েছে নগরীর মীর জুমলা সড়কেও। লম্বাটে দেয়াল জুড়ে আঁকা হচ্ছে ‘মোদের গৌরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা, ৫২ থেকে ২৪, মাতৃভাষায় যাহার শ্রদ্ধা নাই সে মানুষ নহে, আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়ির তীরে’। মাতৃভাষা বাংলার ইতিহাসের সাথে ২৪শের গণঅভ্যুত্থানও স্থান পেয়েছে এই দেয়াল গুলোতে। শিল্পিদের এই কারুশিল্প দেখতে ভীর করছেন অনেকেই। শখের বসে কেউ ছবি তুলে সাক্ষী হতে চাইছেন, কেউবা হাতে রং মেখে নিয়ে দেয়ালে ছাপ দিচ্ছেন। নানা রঙে, নানা ধরনের ফুল দিয়ে ভরে গেছে দোকানগুলো। ছোট বড় মাঝারি বিভিন্ন ধরনের ডালা,বুকে বানিয়ে ইতি মধ্যে বিক্রিও করছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবারের ছোট বড় সদস্যদের নিয়ে এমন প্রস্তুতি দেখতে ভীর জমাচ্ছেন অনেকেই।
শিল্পিরা বলেন, ভাষা আন্দোলন দেখার সুযোগ না হলেও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এ আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস শহীদদের রক্ত রাঙা ইতিহাস। এই দিন সামনে রেখে আমরা আমাদের ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা এ কাজগুলো করে যাচ্ছি। এ কাজে যুক্ত হতে পেরে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। আমাদের শহীদ মিনারে আল্পনা আঁকা শেষ। আমরা চেষ্টা করেছি সবকিছু নতুন করে সাজিয়ে সবাইকে একুশে উপলক্ষে উপহার দিবো। সবাই যখন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসবে তখন মিনারকে নতুন রূপে দেখতে পারবে।
ফুল ব্যবসায়ী জাকির বলেন, এবছর অন্যান্য সময়ের থেকে এখন বেচাকেনা তুলনামূলক কম। তবে এই মধ্যরাত ও ২১শে ফেব্রুয়ারীর সম্পূর্ন দিন নিয়ে আমরা কিছুটা আশাবাদী। ক্রেতাদের কাছে বছরের সব সময় এই ফুলের চাহিদা থাকে না। সারা বছর যে চাহিদা থাকে তার থেকে বছরের এ সময়ে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। আপাতত ফুল দিয়ে অর্ডার গুলোর কাজ শেষ করছি, আর বিক্রি করার জন্য কিছু মালা, বুকে বানিয়ে রেখেছি। অনেকেই তৈরি ডালা কিনে নিচ্ছে যায় তাই আগে থেকে কিছু বানিয়ে সাজিয়ে রাখছি। আশা করছি আমরা প্রতিবছরের মতো এইসময়টা ভালো বেচাকেনা করতে পারবো। দাম একটু বেড়েছে কারণ চাষিরা সারা বছর ছেড়ে এই সময়টার আশায় থাকে। তারাও ফুলের দাম বেশি রাখে আমাদেরও বেশি দিয়ে কিনতে হয়। তাই অন্য সময়ের তুলোনায় এবার দাম বেশি। একটি ডালা বা তোড়া তৈরিতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ ধরনের ফুল দরকার। এতে গোলাপ, গাদা ছাড়াও আরও নানা ধরনের ফুলের ব্যবহার করা হয়।
সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, সারা নারায়ণগঞ্জ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। নারায়ণগঞ্জবাসী শান্তিতে ও নিরাপত্তার সাথেই অমর একুশে শহীদদের শ্রদ্ধঅ জানাতে পারবে। আজ সকাল থেকেই পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আছে। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটন ঘটবে বলে আমরা আশা করি না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না। অমর একুশের উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন, পুষ্পস্তবক অর্পন, আলোচনা সভা, দোয়াসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন জেলা প্রশাসন করেছে। আমরা প্রতিবার শহীদ মিনারে আল্পনা করতাম। কিন্তু এবার নগরী মীর জুমলা সড়ককে অবমুক্ত করে সেখানে একুশের আল্পনা করেছি। আমাদের এই একুশে ফেব্রুয়ারিকে বুকে ধারণ করতে হবে বাংলা ভাষার সঠিক উচ্চারণ ও ব্যবহারের মধ্য দিয়ে।