অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান ঘটেছে: বাসদ নেতা বিপ্লব
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ফকির লালন সাঁই-এর ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’—এই বাণীকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৫টায় বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বাসদের নারায়ণগঞ্জ জেলা সদস্য সচিব কমরেড আবু নাঈম খান বিপ্লব দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সারাদেশে মব সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
কমরেড আবু নাঈম খান বিপ্লব বলেন, ফকির লালন ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন লোক দার্শনিক। তিনি বাউল চিন্তার আলোকে জাত-পাত, ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানবতার জয়গান গেয়েছিলেন। তিনি অন্তজশ্রেণির ভাব-সম্পদ ধারণ করে ছিলেন, যা আজকের দিনেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
বাসদ নেতা বিপ্লব বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদ হয়নি। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান ঘটেছে। এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী মাজার, মন্দির, লালনের আখড়া, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য আক্রমণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, “কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মব লিঞ্চিং বা গণপিটুনিতে হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে। নুরা পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলা বা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বাঁধা দেওয়াসহ নারীদের খেলা বন্ধ করা হচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িক মব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, বরং মবকে ‘প্রেসার গ্রুপ’ বলে উৎসাহিত করছে। এটি গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
কমরেড বিপ্লব সদ্য ঘোষিত জুলাই সনদের সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ’৭২ এর সংবিধানের মূলনীতি (সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ) পরিত্যাগ করে জুলাই সনদ তৈরি করেছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের নির্যাস ছিল এই মূলনীতিগুলো। এই কারণে বাসদসহ বামপন্থীরা এই সনদে স্বাক্ষর করছে না।
তিনি ধর্ম-বর্ণ, জাতিতে জাতিতে বিভাজনের রাজনীতির পরিবর্তে মিলনের রাজনীতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, লালনের দর্শন-চিন্তা ও কর্ম আমাদের পথ দেখাতে পারে।
আলোচনা সভার শেষ দিকে তিনি পুঁজিবাদী শাসন শোষণ, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও মৌলবাদী আস্ফালনের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই শানিত করার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। একই সাথে অধঃপতিত বুর্জোয়া অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুস্থ্য ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংস্কৃতি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি প্রদীপ সরকারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও আলোচনা করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কবি কামরুজ্জামান ভূইয়া, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনিসুপান্থ, চারণের জেলা সদস্য সেলিম আলাদীন, বেলাল হোসাইন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা আহব্বায়ক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

 
			




