রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫
Led04রাজনীতি

অধিকার আদায়ে না.গঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের মতবিনিময় সভা

# কোনো সরকার নারায়ণগঞ্জের দিকে সু-নজর দেয়নি: রফিউর রাব্বি
# দূর্বৃত্তদের জন্য নারায়ণগঞ্জ আজ ভেঙে পড়েছে: এড. মাসুম
# একক সংগ্রামে সরকার হটেনি, একত্র হয়েই পেরেছি : হাফিজুল ইসলাম
# বিপ্লবের পর মানুষদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবিক অর্থে রূপ নেয়নি: অধ্যক্ষ সামসুল আজাদ
# সমস্যার সমাধান একত্রে চাইতে হবে: এড. আওলাদ হোসেন

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: জেলার নাগরিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষে মতবিনিময় সভা করেছে ‘নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন’ সংগঠন। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে নগরীর আলী আহমেদ চুনকা পাঠাগারের মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় সভাপতির বক্তব্য সংগঠনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, অনেকের প্রশ্ন করতে পারেন নতুন সংগঠনের প্রয়োজন পড়ল কেন? একটি রাষ্ট্র গঠনের দায়িত্ব সরকারের, কিন্তু নাগরিকের কাজ কি সেটা নিয়ে আমাদের ধারণা নেই। কিছুদিন আগে এনসিসিতে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। এখানে কদম রসূল সেতু, খানপুরের পোর্ট কন্টেইনার, পঞ্চবটি থেকে উড়াল সেতুর কাজের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও এ শহরের সকল সমস্যাগুলো হয়েছে কারণ এখানে একটি অপরিকল্পিত নগরায়নের মধ্যে আমরা বাস করছি। এই প্রকল্পগুলো যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে এত আরো কোলাপস করবে। আমরা যে নাগরিক আন্দোলন করি সেগুলো যে একদম মূল্যহীন টা নয়। এগুলো দিয়ে কিছু কাজ হয়। এই লক্ষীনারায়ণ কটনমিলের ৫০০ শ্রমিকদের কুকুরের মত উচ্ছেদ করেছে। এই শ্রমিকদের শেয়ার হস্তান্তর যোগ্য না তাও শ্রমিকরা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি তারা ৫ কোটি টাকায় কিনেছে। তখনো এখনো হরিলুট চলছিল সেটা এখনো চলছে।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে বিগত ১৫০ বছরে জনগণ বেড়েছে ৩৪ গুণ। কিন্তু আরো ১০০ বছর পর আমাদের এই নগরীতে জনগণ দাঁড়াবে ৩ কোটি আর বেশি। এখানে যে প্রকল্পগুলোর কথা বলা হলো সেগুলো এনসিসি নয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিয়েছে। এনসিসি চিঠি দিয়েছে এগুলো না করার জন্য। আমরা জানি যত প্রকল্প তত লুটপাট। স্বাধীনতার আগে বা পরের কোনো সরকার নারায়ণগঞ্জের দিকে সু-নজরে থাকেনি। এখানে যারাই প্রতিনিধি হয়েছে তারা সবাই লুণ্ঠন করছে। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংকটে সংগঠন করে আন্দোলন করেছি। বাস ভাড়া বাড়ানোর পর আমরা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে আমরা আন্দোলন করি। ত্বকীকে হত্যার পর একটা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ করেছি। বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে দিয়ে আন্দোলন করে গডফাদারে বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সেই লড়াই সরকারের বিরুদ্ধেও হয়েছে। এখন সেই সরকার না থাকলেও অবস্থা একই আছে। তাই আমাদের সকলের আওয়াজ তোলা জরুরি। শুধু আমার বা আপনার নয়, আমাদের সকলের একসাথে আওয়াজ তোলা জরুরি। তাই এই সংগঠনটা আনা।

খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, আমরা সবাই সুন্দর নারায়ণগঞ্জ চাই। আমরা সব সময় একটা সংগঠনের মধ্য দিয়ে সংগ্রাম করে দাবি আদায় করেছি। তবে সব সংগঠন একত্র করতে আমাদের বৃহত্তর সংগঠন দরকার। এই জেলার দূর্বৃত্তদের জন্য নারায়ণগঞ্জ সুন্দর ও শান্তিময় হয়ে পারে নি। তাদের জন্য আমাদের সন্তানকে হারাতে হয়েছে। আজ সমগ্র নারায়ণগঞ্জ ভেঙে পড়েছে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ হাজারো সমস্যা জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের একত্র হতে হবে। আমরা যে পরিমান রাজস্ব দেই সেই পরিমাণে উন্নয়ন চাই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এসপি বলেছে আমার পুলিশ দুর্নীতি করলে আমি এসপিগিরি ছেড়ে দিবো। আপনি এসপিগিরি ছেড়ে দিবেন সেটা বলা উচিত না। আপনার পুলিশ কত সাধু আমরা জানি। আপনিও তো আগে এসপি হননি। ওসি, এএসপি তারপর এসপি হয়েছেন। যারা বিদায় নিয়েছে আপনিও তাদেরও পার্ট ছিলেন। অতীত খুঁজলে অনেক কিছু পাওয়া যাবে। ডিসি, এসপি ও সিভিল সার্জন নিজের কাজ করলে এমনি সব সমস্য সমাধান হয়ে যায়। এক গডফাদার গেছে আরেকজন যেন না হয়। ওসমান পরিবারের কাছে নারায়নগঞ্জের কাছে জিম্মি ছিল। মেয়র আইভী আওয়ামীলীগ হলেও সে গডপাদারের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। কিন্তু তাও তাকে নিয়ে সেলিম ওসমানের সাথে মিশিয়ে ফেলছে। আমি জানি না ভালোকে ভালো বলতে কি সমস্যা। মেয়র আইভী সেদিন নেতৃত্ব না দিলে ওসমানরা আমাদের অস্তিত্ব রাখতো না। বিভিন্ন দেশে দেখি একনায়ক পালায়। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন পালায় তার গুষ্টি নিয়ে পালায়। এই যে বিভিন্ন যায়গা আজমীর খুনির পোষ্টার লাগানো আছে সেগুলোর জন্য প্রশাসনকে জবাবদিহিতা করতে হবে। আমরা আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নারায়ণগঞ্জ আমাদের মা, আমাদের মাকে বাঁচাতে হবে।

কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের সমস্যাগুলো বিগত সময়ে অনেক বলেছি। আমরা জানি ফুটপাত কারা দখল করে আছে। বিভিন্ন হাসপাতাল, শপিংমল থেকে কারা ফুটপাতে পাকিং করে। এই নারায়ণগঞ্জের শহরে বসবাসরত সকল মানুষের মধ্যে সিংহভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত। আমরা বিভিন্ন সংগঠন যার যার মতো সংগ্রাম করেও সরকার হটাতে পারিনি। কিন্তু ওই ছাত্রদের আহ্বানে যখন আমরা নেমেছি তখন পেরেছি। আমাদের সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সামসুল আলম আজাদ বলেন, বিগত ২১ বছর ধরে আমি নারায়ণগঞ্জ আসি কাজের কারণে। অনেকেই সকালে ঢাকা থেকে আসে, আবার সন্ধ্যায় চলে যায় একটা অতিথি পাখির মত। নারায়ণগঞ্জ বিশাল ঘনবসতির মানুষ। বিপ্লবের পরবর্তী সময়ের পর মানুষদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবিক অর্থে রূপ নেয়নি। আমাদের সকল দিক বিবেচনা করে কাজ করতে হবে।

জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেন, দুর্বৃত্তের ২টি রূপ। একটা চাঁদাবাজি করে আরেকটা শীতলক্ষা নদী শোষন করে। লক্ষী নারায়ণ্যের কি করুন অবস্থা হয়েছে তা আমি দেখেছি। যারা এই লক্ষীনারায়ণ নিয়ে নানা অত্যাচার করেছে তারা এতদিন ৪-আসনের এমপির শ্যালকের বন্ধু ছিলেন। পট পরিবর্তনের পর এখন তারা বিএনপিকে অর্গানাইজ করছে। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা আগের মতই আছে। এখানের এসপি নিজেকে পাবলিক সার্ভেন্ট মনে করে না। সে নিজেকে রাজা মনে করে। হাসপাতালগুলোর অসভ্য অবস্থা। এই সমস্যা সমাধান আমাদের একত্রে চাইতে হবে। দরকারে আমরা এসপি, ডিসি সিভিল সার্জন নিয়ে গোল টেবিল বৈঠক করবো।

এনসিসির সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর করার সদিচ্ছা সবার আছে। কিন্তু সেটাকে একত্র করার আয়োজন একটি ঘাটতি ছিলো। কিছুদিন আগে ডিসির অফিসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মিটিং হয়েছে। আমার ওয়ার্ডের ৩-৪ টা রাস্তা একভাবে যেন জোর করে আটকে রেখেছে। দীর্ঘদিন আমি কথা বলেছি কিন্তু কাজ হয়নি। আমি যখনই সংঘবদ্ধ নয় ব্যক্তিগত ভাবে আওয়াজ তুলেছি তখন কেউ না কেউ সেটাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করেছে। আমি এই সংগঠনের যাত্রার শুভ কামনা করি।

জেলা খেলাঘরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী বলেন, সমাজে এত রক্তক্ষয়ী মধ্য দিয়ে একটা স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কিন্তু এখন যারা আছে তাদের মধ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে এটাই আমরা ধারণা করছি। নারায়ণগঞ্জের নানা সংগঠন নানা সংগ্রাম করেছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। বিশেষ করে ত্বকী হত্যার পর নারায়ণগঞ্জের মানুষ সরা দেশে আলোড়ন করেছে। দেশ জেনেছে এখানে একটা দুর্বৃত্ত একটা ছেলেকে হত্যা করেছে। আমরা বাস ভাড়া নিয়ে আন্দোলন করেছি, দাবিও আদায় হয়েছে। এখানও যারা ক্ষমতার যেতে চায় তাদেরও দায়িত্ব আছে। আমরা অনেকে চিন্তা করি হকার পূর্নবাসন না করে উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবে। কিন্তু এভাবে চিন্তা করার উচিত নয়। আগস্টের আগে মেয়র আইভী অনেককে ধরে এই ফুটপাত ও সড়ক যানজট মুক্ত করেছেন। কিন্তু আজকে নারায়ণগঞ্জের কোনো মা-বাবা নেই। মানুষ হাঁটতে পারে না, চলতে পারে না। এই বিপ্লবী সরকার যদি বিপ্লবী পরিবর্তন করত তাহলে ভালো হতো। কিন্তু তাদের কাছে কিছু আশা করা কঠিন ব্যাপার। আজ এই সংগঠনের মধ্যে দিয়ে যদি সবাই সম্পৃক্ত হই তাহলে একটি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়তে পারবো।

এনসিসির ট্রাসনপোর্ট প্লেনের ফাহাদ বলেন, নারায়ণগঞ্জের ট্রাসনপোর্টের জন্য বিভিন্ন প্ল্যান রয়েছে। তারা বলছে তারা আরেকটা টার্মিনাল করবে। যেখানে আই জায়গায় ২ কিলোমিটারের মধ্যে আরও একটা টার্মিনাল আছে। সেই টার্মিনালটার ১০ শতাংশ পর্যন্তা এখনো তারা ইউটিলাইজ করতে পারেনি কিন্তু নতুন প্রকল্প এনেছে। আমরা ভিজিট করতে গিয়েছিলাম, আমরা দেখেছি সেখানে ২ মাসের মধ্যে ১ টা জাহাজ এসেছে। এগুলো নিয়ে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে। একটা সমস্যা তো রাতারাতি সমাধান হবে না তবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, খেলাঘরের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, জেলা বাসদের সদস্য আবু নাঈম খান বিপ্লব, সুজনের পক্ষ থেকে ঝিমান সহ জুয়েল, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি লক্ষী চক্রবর্তী, ন্যাপের জাহাঙ্গীর আলম টিপু, কাশিপুর নাগরিক সমাজ সভাপতি নূর আলম দিদ্দিকি, কুতুবপুর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও বাসদ জেলা কমিটির সদস্য এস এম কাদির, জেলা মহিলা পরিষদ ঋণু আহমেদ, জেলা লেখক সংঘের সভাপতি জাকির হোসেন, সাংস্কৃতিক জোটের জহিরুল ইসলাম মিন্টু, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম।

RSS
Follow by Email