অঝোর বৃষ্টিতে থমকে গেছে জনজীবন, তীব্র জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: আকাশ কাঁদছে অবিরাম, আর তার অশ্রুতে ডুবছে নারায়ণগঞ্জ! দুপুর থেকে শুরু হওয়া থেমে থেমে বর্ষণ এক বিভীষিকাময় দৃশ্যের অবতারণা করেছে এ শহরে। জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত, ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেছে, আর নাগরিক দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সর্বত্রই থৈ থৈ পানি; রাস্তা, গলি, জনপদ—সবই যেন এক সুবিশাল হ্রদের অংশ। হাঁটুপানির নিচে ডুবে গেছে শহরের বুক, যা বর্ষা মৌসুমের ভয়াবহতা নতুন করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
পানির নিচে ডুবন্ত নগরী
শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া, প্রেস ক্লাব, উকিলপাড়া, ২নং রেলগেট, ডিআইটি এলাকা—সবই আজ পানির কবলে। বিবি রোড ধরে চলাচলকারী শত শত মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ভোলাইল, মাসদাইর, গলাচিপা, কলেজ রোড, আমলাপাড়া, কালির বাজার, উকিলপাড়া, নন্দীপাড়া, নিতাইগঞ্জ, দেওভোগ, ভূইয়ারবাগ—এই নামগুলো এখন শুধুই জলের সমার্থক। রাস্তা আর জলাশয়ের পার্থক্য মুছে গেছে, যেন প্রতিটি এলাকা এক একটি ছোটখাটো হ্রদে পরিণত হয়েছে।.
কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের দুর্দশা
সকাল থেকে অফিস-আদালত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী মানুষের কপালে যেন দুর্দশার কালো মেঘ জমেছে। ছাতা হাতেও রেহাই নেই, বৃষ্টির ছাঁট আর জলাবদ্ধতার নোংরা পানিতে ভিজে একাকার হচ্ছেন সবাই। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের তীব্র সংকট চরমে। রিকশাগুলো শুধুমাত্র মূল কেন্দ্রে চলাচল করছে, কিন্তু ভেতরের জলমগ্ন রাস্তাগুলোতে প্রবেশ করতে চাইছে না।
অটোচালক অনিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “চাষাঢ়া এলাকাটা যেন কক্সবাজারের সৈকতে পরিণত হয়েছে! এলাকার ভেতরে ঢুকলে অটো ডুবে যায়, মোটর নষ্ট হওয়ার ভয়। তাই আমরা যেতে পারছি না।” যাত্রীরাও বিপাকে। ফারহানা মাইয়াত বিথী ও প্রিয়ন্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রিকশাচালকরা তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া চাইছে! এমন পরিস্থিতিতে এটা অসহনীয়।” রিকশাচালকদের যুক্তি, “জলাবদ্ধতায় প্যাডেল করতে কষ্ট হয়, গতিও কমে যায়। বাড়তি পরিশ্রমের জন্যই বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি।”
নীরব শহরের বাজার
অবিরাম বর্ষণে শহরের বাজারগুলো আজ নীরব, যেন এক মৃতপুরী। বহু দোকানি বৃষ্টিতে ভিজে দোকান খোলা রাখলেও ক্রেতার দেখা নেই। অনেকের দোকানে আজও এক টাকাও বিক্রি হয়নি। মাছ বিক্রেতা সজল আফসোস করে বলেন, “সকাল থেকে পেটের দায়ে দোকান খুলেছি, কিন্তু কাস্টমার নেই। স্টাফদের রোজের টাকাও দিতে পারিনি।” তার স্টাফরা যোগ করেন, “এমন বৃষ্টি আরও কয়েকদিন থাকলে জমানো টাকাও শেষ হয়ে যাবে।” হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও একই চিত্র, ক্রেতার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
ভোগান্তির এক নতুন অধ্যায়
বৃষ্টির মধ্যেই কিছু ছোট খাবারের দোকানে ভিড় দেখা যাচ্ছে। কারণ? শহরের কিছু বাড়িতে গ্যাস নেই! বাধ্য হয়ে নোংরা পানি ভেঙে বাইরে থেকে খাবার কিনতে বের হচ্ছেন মানুষ। মেহেদী হাসান নামে এক বাসিন্দা তার ক্ষোভ উগড়ে দেন, “একদিকে গ্যাস নেই, অন্যদিকে হাঁটুর উপরে পানি। বেঁচে থাকার জন্য তো খেতে হবে! এই দুর্ভোগের শেষ কোথায় জানি না!”
নারায়ণগঞ্জের বর্তমান পরিস্থিতি একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের নির্মম চিত্র তুলে ধরছে, তেমনি অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা এবং নাগরিক সেবার দুর্বলতাও প্রকটভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি কবে মিলবে, সেটাই এখন লাখো নগরবাসীর একমাত্র প্রশ্ন।