শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
Led03জেলাজুড়েবিশেষ প্রতিবেদনশিক্ষা

যেসব কারণে শিক্ষায় পিছিয়ে না.গঞ্জের ছেলেরা

# পরিবারের সচেতনতা বাড়াতে হবে: ডিসি
# প্রধানমন্ত্রী নারী শিক্ষায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়া মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে: রুমন রেজা

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: শিক্ষা একটি জাতির অগ্রগতিতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। গুরুজনেরা বলে গেছেন ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’। তবে বিভিন্ন কারণবসত দিন দিন মেরুদন্ডহীন হয়ে পরছে এ জাতির ছেলেদের একটি বড় অংশ। পরিবারে আর্থিক সমস্য, নেশায় জড়ানোসহ নানাবিদ কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার করতে পারছে না ছাত্ররা। সম্প্রতি এসএসসি পরিক্ষার ফল প্রকাশের এক সভায় প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়টিতে আলোকপাত করেন। এসএসসি পরিক্ষায় ছেলেদের অংশগ্রহন কম কেন সেটা জানতে চেয়ে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

করোনার আগে বিবিএ অর্নাস ২০১৯-২০ সেশনের ব্যবস্থপনা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলে বন্দরের শাহীন (ছদ্মনাম)। তার বাবার চায়ের দোকান দিয়ে চলতো ৫ সদস্যের এ পরিবার। বাবার বয়স হয়েছে, সারাদিন বসে দোকান চালানো শক্তি এখন তার নেই। তাই পরিবারের হাল ধরতে শাহীন এখন নিজেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেকানে সময় দিচ্ছেন। অনার্স ২য় বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর আর তার পড়ালেখা করা হয়নি। শুধু শাহীন নয়, পরিবারের হাল ধরতে এমন অনেকেই শিক্ষা জীবনকে বিদায় জানিয়েছে। শিক্ষায় ছেলেদের অংশগ্রহন কমা কারণ শুধু আর্থিক অসচ্ছলতা নয়, এর সাথে আছে বন্ধু বা কথিত এলাকার ‘বড়ভাই’দের সাথে বিভিন্ন অপরাধ ও নেশায় জড়ানোসহ নানাবীদ দিক। এভাবেই যদি শিক্ষায় ছেলেদের অংশগ্রহন প্রতিনিয়ত কমতে থাকে তাহলে আগামীতে জাতির একটি বড় অংশ পিছিয়ে থাকবে বলে মতামত সচেতন মহলের।

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ছেলেদের শিক্ষায় অংশগ্রহন দিন দিন কমছে এটা আমরাও লক্ষ করেছি। আসলে শিক্ষায় ছেলেদের অংশগ্রহন কমে যাওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারন আছে। এখানে মাদক, কিশোর গ্যাং সম্পৃক্ততা আছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় মধ্যবিত্ত বা নিম্ন বিত্তের পরিবারের হাল ধরতেও ছেলেরা শিক্ষা জীবনকে বিদায় জানিয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমরাও তার নির্দেশনা অনুযায়ি কাজ করছি। তবে এখানে আসলে পরিবারকেও সচেতন হতে হবে। কারণ একটা ছেলের বাহিরে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক হিসেবে নেয় পরিবার। ছেলেটা বাহিরে গিয়ে কি করলো এটা আসলে অনেকেই গুরুত্ব দেয় না, যতটা মেয়ের ক্ষেত্রে দেয়। একটা মেয়ে তো স্বাভাবিক ভাবে শিক্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে বাসা বাদে অন্য কোথাও যায় না। আর মা-বাবাও মেয়েকে নজরে রাখে তাই ছেলেদের তুলোনায় মেয়েরা এগিয়ে।

জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ইউনুছ ফারুকী বলেন,আমরা যখন বিভিন্ন স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই সেখানে দেখি মেয়েরাই বেশি। আগে বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে জিগেস করতাম ফার্স্ট বয় কে? এখন গিয়ে বলতে হয় ফার্স্ট র্গাল কে। আসলে মেয়েরা প্রকৃতদিক থেকেই অনেক শান্ত স্বভাবের। তারা মা-বাবা, শিক্ষকদের কথা শোনে এবং নিয়মিত পরতে বসে। ছেলেরা একটু চঞ্চল প্রকৃতির হয়। তারা সহজে কারো কথা মানতে চায় না। এখন একটা ছেলেকে ছোট বেলায় যেমন জোর করে পড়তে বসানো যেত, বড় হওয়ার পর কিন্তু তেমন জোর কাটানো যায় না। আমাদের দেশের অগ্রগতিতে যেমন পুরুষ ভূমিকা রাখে, তেমনিই নারীরাও ভূমিকা রাখে। স্বাভাবিক অর্থেই আমি একজন বাবা হিসেবে চাবো না আমার এমএ পাশ করা মেয়ের সাথে একটা এসএসসি পাশ করা ছেলের বিয়ে হোক। এখানে বৈষম্য তৈরি হবে।

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. রুমন রেজা বলেন, মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে এটা আমাদের সমাজের একটি ইতিবাচক দিক। আগে একটি সময় ছিলো যখন পরিবারে ছেলেদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো। তাদের পড়ালেখায় মা-বাবা বেশি মনোযোগ দিতো। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী নারী শিক্ষায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়া মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েরা সর্বচ্চ কৃতিত্ব অর্জন করছে। এখন মা-বাবারাও তাদের মেয়ের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে। ছেলেরা শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণ বিভিন্ন দিক রয়েছে। তবে এখানে পরিবারকে সচেতন হতে হবে।

RSS
Follow by Email