শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
Led01রাজনীতি

পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ: গুলিবিদ্ধ ৩, পু‌লিশসহ আহত ১০; আটক ৫

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: হরতালের সমর্থনে নারায়ণগঞ্জ জুড়ে বিএনপির মিছিলকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। বাসে আগুন-ভাঙ্গচুর, টায়ার পুড়িয়ে রাস্তা অবরোধসহ নানা ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। সব মিলিয়ে রোববার (২৯ অক্টোবর) থমথমে অবস্থা বিরাজ করেছে জেলা জুড়ে।

এদিন সকাল সারে ৬টার দিকে নগরীর চাষাঢ়ায় বিএনপির শরিকদল গণতন্ত্র মঞ্চের নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা নগরীর চাষাঢ়া মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়, এসময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ জেএসডির নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মোতালেব মাষ্টারকে আটক করে। সংঘর্ষের সময় যুবদল নেতা সাগর, সুজন ও সোহেল গুলিবিদ্ধ সহ ১০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছে।

এর কিছুক্ষন পরই প্রেসক্লাবের সমানে মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীর জড়ো হতে শুরু করলে শুরু হয় নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দাফায় ধাওয়া পাল্টা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশ লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়ে ও সড়কে আগুন জ্বা‌লি‌য়ে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে যুবদলের ৩ জন গুলিবিদ্ধ ও পুলিশ সহ ১০ জন আহত হয়।

সকাল ৮টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা হরতাল সমর্থনে মিছিল বের করলে বাঁধা দেয় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হন কাউন্সিলর ইকবালসহ ৪জন। অপর দিকে, আড়াইহাজারে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হলে শুরু হয় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ। বেশ কিছুক্ষণ সংঘর্ষ চলাকালিন অর্ধশত নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয় বলে অভিযোগ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা।

এদিকে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাসপোর্ট অফিসের সামনে হরতাল সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জেলা বিএনপিরি নেতাকর্মীরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তবে, পুলিশ আসার আগেই মিছিল শেষ করে চলে যায় নেতাকর্মীরা। তাই সেখানে কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

অন্যদিকে, সকাল ৯টার দিকে মিশনপাড়া এলাকায় মিছিল বের করতে নিলে আবারো মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয় নেতাকর্মীদের। আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করায় তাদের রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এর কিছুক্ষন পরেই মিশনপাড়া এলাকার মোড়ে একটি বন্ধু পরিবহনের বাস ভাঙ্গচুর এবং একটি উৎসব পরিবহনের বাসে আগুন দেয়া হয়। যাতে করে বাসে ৬টি সিট পুরে যায়। বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি এ কাজটি আওয়ামী লীগে।

বিভিন্ন বাঁধা থাকা সত্বেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে কিছুক্ষন পর পর মিছিল বের করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে মিছিল গুলো বের করা হয়। এসময় বাসে আগুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন মিশনপাড়ার মোড়ে একটি বাসে আগুন দেয়। বিএনপির বদনাম করার জন্য ও আমাদের বেকায়দায় ফালানোর জন্য আওয়ামী লীগের লোকেরা বাসে আগুন দেয়। এখানে বিএনপির কোন নেতাকর্মী জড়িত না।

এর আগে শনিবার রাতে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের আধুরিয়ার সড়ক অবরোধ করে কয়েকটি মোটরসাইলে আগুন দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এছাড়া কাচপুর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে হরতালের কারণে সকাল থেকে যানবাহন কম চলাচল করায় ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা সিলেট মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল কর‌তে দেখা যায়নি। যানবাহন কম থাকায় ও হরতালের কারণে সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবুও জীবন জীবিকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বলে জানান যাত্রী সাধারণ এবং গাড়ির চালকরা।

অন্যদিকে, বিএনপির হরতাল প্রতিরোধ করতে নারায়ণগঞ্জ নগরীরসহ বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সকাল ১০ টায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নাশকতা মোকাবেলায় মিছিল বের করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ। এর আগে, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বেলা ১১টায় শহীদ মিনারে অবস্থান নেয় জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড, আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে ১২টায় ২নং রেল গেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বেশ কিছুক্ষন অবস্থান নেয় সিটি মেয়র আইভী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ।

পরে, বিকেল ৪টায় শান্তি সমাবেশ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ। যাতে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দনশীল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম সহ অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, সারা নারায়ণগঞ্জ জুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু সংঘর্ষের ঘটান ঘটলেও ঘটেনি বড় ধরনের কোন অপৃতিকর ঘটনা। সকালে পুলিশের কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, সকাল থেকেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে বিচ্ছিন্নভাবে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এবং ভূইগড়ে আগুন জ্বালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে হরতালের পক্ষে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছিলো। পুলিশ পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ যখন বৈধ কাজ করতে গিয়েছিলো, তখন তারা পুলিশের ওপরও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ও তাদের আক্রান্ত করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে শঙ্কা নেই তা বলতে পারি। তবে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কখন তারা (বিএনপি) কি ধরণের নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরী করবে, মানুষের উপর বিক্ষিপ্তভাবে আক্রমণ করতে পারে।

RSS
Follow by Email