বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
জেলাজুড়েপরিবহনবন্দর

নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহের সমাপনী দিনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রাখবে অবদান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই এক আলোচনা সভার আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ। সোমবার (১০ জুন) বিকেলে নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহের শেষ দিনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এসময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনা নদীবন্দর এই দু’টি নদী বন্দরে শিল্প কারখানা বেশী। বাংলাদেশে এক্সপোর্ট ইমপোর্টের বিভিন্ন সামগ্রীর বেশীরভাগই এই দু’টি নদী বন্দর দিয়ে জাহাজযোগে আনা নেওয়া হয়ে থাকে। যে কারণে শীতলক্ষ্যা ধলেশ্বরী নদীতে পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যাও অনেক বেশী। কয়েক হাজার পণ্যবাহী জাহাজ এই শীতলক্ষ্যা ধলেশ্বরী নদীতে অবস্থান করে। এসব জাহাজগুলো নিরাপদ স্থানে অর্থাৎ একটি পোতাশ্রয়ে রাখার দাবি দীর্ঘদিনের। আমরাও মেঘনা নদীর কোন স্থানে ষাটনলের কাছাকাছি এসব জাহাজগুলো রাখার জন্য পোতাশ্রয় করা যায় কিনা সেটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পেশ করবো। একটি দেশের অর্থনীতির চাকা কৃষি, শিল্পসহ অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। এজন্য শিল্পকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শিল্পকারখানাগুলো দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখে। তবে এসব শিল্পকারখানাগুলো যেন নদীকে দূষণ না করে পরিবেশ দূষণ না করে সেজন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। সবগুলো কারখানাতেই বর্জ্য নিস্কাশনের নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে যে কারণে দূষণগুলো হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ নদীকে দখল দূষণমুক্ত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। শীতলক্ষ্যাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে নারায়ণগঞ্জের মানুষের স্বার্থেই। শীতলক্ষ্যাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে শিল্প মালিকদের স্বার্থেই। এজন্য আমাদেরকে শীতলক্ষ্যাকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে হলে আমাদেরকে নদী ও পরিবেশ রক্ষার কোন বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, আর কিছুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা। এসময় নদীপথে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোতে যাত্রীর চাপ অনেক বেশী থাকে। একটা সময় লঞ্চ মালিকদের মধ্যে যাত্রীবোঝাই করে লঞ্চ চালানোর প্রবনতা থাকতো। যদিও সেটা কমে আসছে। তবে নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলরত লঞ্চগুলো যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা না হয় সেদিকে আমরা সতর্ক থাকবো।

বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার বলেন, বিভিন্ন শিল্প কারখানার রং কেমিকেল খাল বিল নদীতে নিক্ষেপের মাধ্যমে শীতলক্ষ্যাকে দূষিত করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ বিগত দিনে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে নদীর তীর রক্ষায় ওয়াকওয়ে সীমানা পিলার স্থাপন করেছে। আমরা আশা করবো নদীকে দূষণমুক্ত করতেও বিআইডব্লিউটিএ বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিবে। নৌপথ নিরাপদ রাখতে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি শীতলক্ষ্যায় যেসব নৌযান এলোপাথারি বার্থিং করে রাখে এবং বালুবাহী বাল্কহেডগুলোতে নিরাপদে রাখতে পোতাশ্রয় নির্মাণ জরুরী।
নারায়ণগঞ্জ নৌ থানার এএসআই মোঃ আলামিন বলেন, শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী এলাকায় কমপক্ষে ১১টি গরুর হাট রয়েছে। এসব হাটগুলোতে জোরপূর্বক গরু নামানোর ঘটনা ঘটছে। দেখা যায় সিরাজগঞ্জ পাবনাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারীরা ট্রলারে করে গরু নিয়ে আসছে। দেখা গেছে সে হয়তো কোন হাট থেকে দাদন নিয়েছে। কিন্তু আসার পথে কোন হাটে তাদের ট্রলার আটকে জোর করে গরু নামানো হচ্ছে। এভাবে জোর করে গরুর ট্রলার থামাতে গিয়ে রোববার মদনগঞ্জে হাট ইজারাদারের একটি ট্রলার ডুবে গেছে। যদিও কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। আমাদের নৌ পুলিশের স্বল্পতা রয়েছে। দেখা যায় আমরা খবর পেয়ে একদিকে যাচ্ছি তো অন্যদিকে ঘটনা ঘটছে। তিনি আরো বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীকে দখল দূষণমুক্ত রাখার কোন বিকল্প নেই। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ বদিউজ্জামান বাদল, বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ পরিচালক মোবারক হোসেন মজুমদার, উপ পরিচালক ওবায়দুল করিম, ডিইপিটিসি এর প্রধান প্রশিক্ষক মোঃ আশরাফুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ নৌ থানার এএসআই মোঃ আলামিন, বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার প্রমুখ। সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নৌ নিট্রা বিভাগের উপ পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য। সঞ্চালনায় ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের পরিদর্শক (টিআই) মোঃ সেলিম।

RSS
Follow by Email