ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে শহীদদের স্মরণে ছাত্র ফেডারেশনের শ্রদ্ধা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে শহীদদের স্মরণে গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমশিখা প্রজ্জ্বলন ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে একাত্তর থেকে চব্বিশ পর্যন্ত রক্তের শপথ নিয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
জেলা সভাপতি ছাত্রনেতা ফারহানা মানিক মুনার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা সৃজয় সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা অর্থ সম্পাদক শাহিন মৃধা। এ সময় তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কলেজ ও কদম রসুল কলেজ শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে ফারহানা মানিক মুনা শহীদ, আহতসহ সকল যোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আমরা বছর ঘুরে আবার জুলাইয়ে এসে দাঁড়িয়েছি। জুলাই বাংলাদেশের তথা নারায়ণগঞ্জের মানুষের প্রাণের ডাক! যেখানে প্রত্যেকটি মানুষ তার মর্যাদা-অধিকার রক্ষার জন্য বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে। লড়াইয়ে হাজারো যোদ্ধা শহীদ হয়েছেন, শত শত যোদ্ধার অঙ্গহানি হয়েছে, দৃষ্টি হারিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই একই যুদ্ধ, ত্যাগ আমরা ‘৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে দেখেছি। বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করেছিল স্বাধীনতার জন্য। আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচারের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র নির্মাণ। রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতাকে কতিপয় গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানিয়ে মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করে গুম, খুন, অন্যায়ে মাতোয়ারা হয়েছিল।”
মুনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ এর বিপরীতে লড়াই করেছে মর্যাদা-অধিকারের জন্য, যার ধারাবাহিকতায় পুঞ্জিভূত ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটে জুলাইয়ের অভ্যুত্থান রূপে। সকল বিভেদের ঊর্ধ্বে আপামর জনসাধারণের সম্মিলিত লড়াইয়ে অর্জিত হয় ‘৫ আগস্টের স্বৈরাচার থেকে মুক্তির গৌরব। তবে, চব্বিশেও আমরা একই মীরজাফরির পুনরাবৃত্তি দেখছি। যারা ক্ষুদ্র স্বার্থে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে লড়াইকে বিনষ্ট করতে চায়। এই জুলাই সাক্ষী, প্রতারণাকারী, স্বার্থান্বেষী, গণশত্রুদের বাংলাদেশের মানুষ ছাড় দেয়নি।”
ছাত্রনেত্রী ফারহানা মানিক মুনা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “একাত্তর থেকে চব্বিশ আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে, মুক্তির সংগ্রামকে, প্রত্যেক শহীদের রক্তকে হৃদয়ে ধারণ করি। যারা মানুষের সংগ্রাম-রক্ত-ত্যাগকে বিক্রি করতে চায়, তাদের বিপরীতে আমরা আবু সাঈদ, রিয়া, শাকিল, আমানত, আদিলদের রক্তের শপথ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা লড়ছি সেই সকল শহীদদের নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে। আমরা লড়ছি আহত সেই সকল যোদ্ধাদের প্রতিনিধি হয়ে, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, দৃষ্টি হারিয়েছে। আমরা লড়ছি সেই প্রত্যেক যোদ্ধাদের সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচারের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়বার প্রত্যয় নিয়ে।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যারা গায়েবি মামলা কিংবা মামলা বাণিজ্য চালিয়ে জিসানদের বিনা বিচারে কারাবাসী করে, নারীকে অবমাননা করে, মানুষের বিশ্বাসের মাজার-মন্দিরে আঘাত করে, হত্যা-প্রতিহিংসা-দখলের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে, তাদের ঠাঁই হবে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সাথে।”
মুনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “সকল বিভাজনের চেষ্টাকে প্রতিহত করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে আমরা বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চিত করবো মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার মর্যাদা-সুবিচারের গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন রাষ্ট্র। নারায়ণগঞ্জবাসীর সঙ্গবদ্ধ লড়াইয়ে নিশ্চিত হবে নিরাপদ নারায়ণগঞ্জ।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে সকল শহীদ, আহত ও যোদ্ধাদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন মাসব্যাপী ‘Recalling the JULY’ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। জাতীয় সঙ্গীত ও রক্তঝরা জুলাইয়ের প্রাণ ‘মুক্তির মন্দিরে সোপান তলে’ সঙ্গীত পরিবেশন পরবর্তীতে শহীদদের স্মরণে নীরবতা পালন ও মোমশিখা প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে জুলাইয়ের কর্মসূচীর সূচনা করা হয়।
মাসব্যাপী এই কর্মসূচীর আওতায় ধারাবাহিকভাবে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্তে মেডিকেল ক্যাম্প, অভিজ্ঞতা বিনিময়, ছাত্র সমাবেশ ও মতবিনিময়, বৃক্ষ রোপণ এবং ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে।
শ্রদ্ধা নিবেদনে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী জননেতা তরিকুল সুজন, নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস, মহানগর সমন্বয়কারী বিপ্লব খান এবং নির্বাহী সমন্বয়কারী পপি রাণী সরকার।