শুক্রবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
Led01পরিবহনবিশেষ প্রতিবেদন

গণপরিবহনে নতুন ভাড়া কার্যকর, অর্ধেক ভাড়ার সুবিধা পায়নি শিক্ষার্থীরা

# বাস কাউন্টারে শিক্ষার্থীদের ‘উঠলে উঠো না উঠলে নাই’
# টিটকারিসহ উস্কানীমূলক কথা বলেছে: শিক্ষার্থী
# অর্ধেক ভাড়া করতে হবে, অন্যথায় আন্দোলনে নামবো: ছাত্র নেতৃবৃন্দ
# উদ্ভুত সকল পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে: রফিউর রাব্বি
# ছাত্রদের সাথে এমন ব্যবহার প্রশ্নই উঠেনা: অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের দীর্ঘ ২১ দিনের আন্দোলনের পর, বাস মালিকদের সাথে কথা বলে ভাড়া কমিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গণপরিবহন বাসে অর্ধেক ভাড়া ঘোষণা দেয়া হয়। নির্ধারতি বাস ভাড়া কমানো পর সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে। কথা মতো প্রথম দিনে যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে। এতে করে বেশ সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে যাত্রীদের ভাড়া কমালেও শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া আদায় করার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটা কার্যকর হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে টার্মিনাল বাস কাউন্টার, ২নং রেলগেইট (ভাসমান কাউন্টার) ও চাষাঢ়া লিংক রোডের কাউন্টার গুলোতে নিত্য দিনের মতো যাত্রী আসা যাওয়া করছে। থেমে থেমে ভীর জমছে যাত্রীদের। সবাই বেশ খুশ মেজারের ছিলেন। ৫৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা করায়।

একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়। তারা এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা নারায়ণগঞ্জে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের নেতৃবৃন্দদের সাথে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছি। তাদের আন্দোলনে আমরা শিক্ষার্থীরা সংহতি প্রকাশ করেছি। আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য তাদের অধিকার আদায়ে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি। এই আন্দোলনে সাধারণ যাত্রীদের যেমন ভাড়া কমানো দাবি তোলা হয়েছে, একইরকমভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফপাস ভাড়া করার দাবিও উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে আমরা হরতাল করতে চেয়েছি। কিন্তু জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের হরতালের একদিন আগে ভাড়া কমায়। আমরা সেটাতে সন্তুষ্ট ছিলাম। সোমবার থেকে সেই ভাড়া কার্যকর করা হলেও আমরা সোমবার কাউন্টার গুলোতে উল্টো চিত্র দেখতে পেয়েছি। তারা যাত্রীদের ভাড়া কমালেও শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া করেনি। বরং পরিবহর কতৃপক্ষ লোকজন আমাদের সাথে মারমূখি আচরণ করেছে।

মো. আল মেহেদী নামে এক শিক্ষার্থী লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানায়, প্রতিদিনের মতো ঢাকায় যাওয়ার জন্য কাউন্টারে যাই টিকিট কাটতে। সেখানে অর্ধেক ভাড়া দিতে চাইলে তারা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। যখন বলি যে জেলা প্রশাসক ভাড়া অর্ধেক করছে আপনারা কেন বেশী নিচ্ছেন। তখন তারা আমাকে বলে সবার জন্য এক ভাড়া কোন অর্ধেক ভাড়া নাই। আমাদের বলে ‘এমন কোন নোটিশ আমরা পাইনি। উঠলে উঠো না উঠলে নাই’ নিরুপায় হয়ে বেশী পূর্ণ ভাড়া দিয়েই টিকেট কাটি।

ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে ফেরার পথে বন্ধন বাস কাউন্টারে টিকিট কাটতে যায় টুটুল রাজবংশী নামে এক শিক্ষার্থী। অর্ধেক ভাড়া দিতে চাইলে তার সাথে তর্কতর্কি করে কাউন্টারে থাকা বাস মালিকের লোকজন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের কথা হরতাল প্রত্যাহারের পক্ষে গেলাম। কিন্তু আমাদের কোন অর্ধেক ভাড়া দেয়া হলো না। উল্টো আমাদের বলে কে ‘বাসে উঠলে উঠেন বাসে না উঠলে চলে যান, সবার জন্য এক ভাড়া। আমরা কোন অর্ধেক ভাড়া রাখার অনুমতি পাইনি’। এছাড়াও টিটকারিসহ উস্কানীমূলক কথা বলছে কাউন্টারের লোকজন।

অর্ধেক বাস ভাড়া না রাখায় সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ভবনে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের ছাত্র নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা দাবি জানায়, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর ২১ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির মুখে জেলা প্রশাসক ঘোষণা করেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ৫০ টাকা বাস ভাড়া, ছাত্রদের জন্য অর্ধেক ভাড়া। আমরা ওই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আজ সোমবার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের কোন বাসেই ছাত্রদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নয়, পুরো ভাড়া রাখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সকালে ঢাকায় যাবার জন্য বাস কাউন্টারে গেলে অর্ধেক ভাড়া রাখার ব্যাপারে তর্কাতর্কি এবং বিব্রত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কোন বাস অর্ধেক ভাড়া রাখছে না। এই পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্য ব্যাপক ক্ষোভ এবং অসন্তোষ দেখতে পেয়েছি। এবং আমরা আশঙ্কা করি, যেকোন সময় বাস কাউন্টার কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নিতে পারে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জেলা প্রশাসকের ঘোষণা অনুসারে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করতে হবে। অন্যথায় আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। শিক্ষার্থীরা সরকার পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে, অর্ধেক ভাড়া আদায় করতেও সক্ষম হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রি অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, শনিবার জেলা প্রশাসন সংগঠনের তিন দফা দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আমরা হরতার কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেই। আজ সোমবার থেকে ভাড়া কমানো ও ছাত্রদের অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ বন্ধন ও উৎসব পরিবহনে ছাত্রদের অর্ধেক ভাড়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা আগামীকালের মধ্যে ছাত্রদের অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি। নতুবা কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করার ঘোষণা দিচ্ছি। তখন উদ্ভুত সকল পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হুসাইন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা এই বিষয়ে অবগত না। ছাত্রদের সাথে এমন ব্যবহার প্রশ্নই উঠেনা। আমরা বাস মালিকদের সাথে কথা বললে এই বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

RSS
Follow by Email