শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
Led04জেলাজুড়েফতুল্লারাজনীতি

‘এখনকার গরু কাটা চামচ দিয়ে খাবার খায়’

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেন, ‘গো খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে এখানে আমি সরকারকে দায়ী করতে পারবো না, কারণ সারা বিশ্বেই এই দামটা বেড়েছে। যুদ্ধের কারণে ডলারের দাম বাড়ছে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে মানুষই খেতে পারছে না। আর এ দিকে এখনকার গরু তো কাঁটা চামচ দিয়ে খাবার খায়। আগে গরু ঝাউ, ঘাস, লতাপাতা খেতো কিন্তু এখন তারা এগুলো খায় না। এখন তারা ভাল খাবার খায়। গরুকে উন্নত খাবার খাওয়াতে হয়। আমার কাছে মনে হয়, আমরা যতটুকু খাই এর থেকে হয়তো গরুকে বেশি খাওয়াতে হয়। কারণ আমাদের খাদ্যের মূল্যের থেকে গরুর খাদ্যের মূল্য অনেক বেশি পরে।

ফতুল্লায় নিজ মালিকানাধীন ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজ লিঃ ও ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজ পরিদর্শনে আসেন সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। পরিদর্শন কালে এ কথা বলেন তিনি।

এসময় তিনি আরও বলেন, এবার কোরবানির ঈদ নিয়ে কোন পরিকল্পনা করিনি বা করতে পারিনি, কারণ সামনে কি হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। মানুষ এই গরু কিনবে কিনা, তাদের সাধ্য অনুযায়ী হবে কিনা সেটাও বলতে পারছিনা। তাছাড়া ২৬ তারিখ একটা ঘূর্ণিঝড় হতে পারে, এটা অনেক মানুষ এফেক্টেড হবে। মানুষের অবস্থা এখন একদমই ভালো না। যদি গরু বিক্রি করতে পারি সে ক্ষেত্রে আমি চিন্তা করব যে আমার এলাকার কোন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় সাহায্য করা যায় কিনা। আমি এটাই করে আসছি বিগত ৩০ বছর ধরে। আমার গরুর খামারের মুনাফার অংশ আমার পরিবারের কাছে যায় না। হ্যাঁ তবে এই গরু থেকে দুধ ও এর থেকে দই-মিষ্টি-ঘি এগুলো আমার পরিবারের কাছে যায়। এছাড়া আমাদের কাছে ষাঁড় গরু রয়েছে যেগুলো ২০২৫ এবং ২০২৬ এর জন্য খুলনায় রেডি হবে।

তিনি আরও বলেন, যেভাবে গো খাদ্যের দাম বাড়ছে, সেভাবে গরুর লালন পালন করা মোটেও সহজ বিষয় নয়। যারা স্বল্প আকারে গরু লালন পালন করছেন তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। গতবারের গরু বিক্রি করে যে মাদ্রাসা তৈরি করেছিলাম সেটার কাজ এখন প্রায় শেষের পর্যায়ে। দেখি এবার গরু বিক্রি করে টাকাটা কোন ভালো কাজে লাগানো যায় কিনা। আমার এখানে কয়েক জাতের গরেু আছে। ১ লক্ষ টাকা থেকে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গরু আছে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতের মহিষও আছে। মানুষের কাছে বর্তমানে গরুর দাম চাইতেও লজ্জা লাগে, গো খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে সেভাবে এই গরু পালনের ব্যবসাটা হয়তো চলমান রাখা যাবে না। আমাদের গরু খুলনায় ডেভেলপমেন্ট করা হয়, খুলনা থেকে গাভী গরু এবং বাচ্চা গরু যেগুলো ছোট থেকেই সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পালন করি। বাছুরগুলো আমরা কিনে নিয়ে এসে এক দেড় বছর ধরে লালন পালন করি। আমরা কখনো মুনাফা বা প্রফিটের জন্য গরু বিক্রি করি না। এবারের গরুগুলো শুধুমাত্র খরচের ওপর ভিত্তি করেই দাম নির্ধারণ করেছি। সবসময় আমাদের কাছ থেকে যারা গরু নেয় তারাই তো স্বাভাবিকভাবে নিবেন, এছাড়াও যদি কেউ শখ করে আমাদের কাছ থেকে গরু নিতে চান জানাবেন আমাদের এখানে বিভিন্ন দামের গরু আছে।

সেংসদ সদস্য বলেন, প্রতিটা গরু আমাদের দেড় থেকে দুই বছর পালতে হয়। আমি কখনো লাভের চিন্তায় গরু পালন করি না, যদি এবার গরু বিক্রি হয়ে যায় তাহলে হয়তো আগামী বারের জন্য গরু লাগানো পালন করতে পারবো। যদি এবার বিক্রি না হয় তাহলে হয়তো আগামী বারের জন্য লালন পালন করতে পারব না। আমাদের এখানে প্রায় ৩৫০ মতো গাভী আছে যার থেকে আমরা প্রায় সাড়ে তিন হাজার লিটার দুধ পাই। দুধের কিছু অংশ আমরা বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে বিক্রি করে দেই, আবার কিছু পেটেকজাত করে বাচ্চাদের জন্য দুধ টা রাখি। আমার এই ব্যবসা একটা ছাগল দিয়ে শুরু করেছিলাম, প্রায় ৩৫ বছর হয়ে গেল আজ আমার এখানে এসে এসেছি। নিজস্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে যতটুকু বুঝি ততটুকুই লালন-পালন করি। আমার খরচ মিলিয়ে যা আগে বিক্রি করেছি বা যা এখন বিক্রি করব সব মিলিয়ে হয়তো তিন কোটি টাকার মত হবে। এখানে ১৫০ টি গরু এবং কিছু মহিষ আছে। অনেকে এসেছেন গরু পছন্দ করে চলে গেছেন অথচ আমি দাম ও তাদের বলিনি। তাদের কথা দাম যেটাই হোক, তাদের এই গরুই পছন্দ হয়েছে। তারা অনেক বছর ধরে আমার কাছ থেকে গরুকে কিনেছে। উনাদের আমার উপর একটা আস্থা আছে।

বিগত কিছুদিনের তাপদাহের প্রভাব সম্পর্কে এমপি আরও বলেন, তাপদাহের জন্য আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারণ আগে যেখানে শতভাগ ঘাস উৎপাদন হতো সেখানে এখন ৫০ ভাগ ঘাস উৎপাদন হচ্ছে। আবার অন্যদিকে এই ৫০% ঘাস টাই গরু খাচ্ছে না। তাপদাহের কারণে ঘাস শুকিয়ে গেছে এবং যার কারণে গরু এটা খেতে চায় না। আমরা খুলনায় ১০০ মিটারে ঠিক ঘাসের চাষ করছি। আমরা গাসে প্রতিনিয়ত পানি দিতে পারায় আমাদের প্রবলেম কম হচ্ছে, কিন্তু যারা সাধারণভাবে ঘাস চাষ করছেন তাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাপদাহের কারণে দানাদার খাদ্যসহ ঘাসের উপর অনেক প্রভাব পড়েছে।

প্রসঙ্গত, এবার কোরবানির ঈদের জন্য ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজ লিঃ ও ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজে শাহিওয়াল গরু ৪১ টি, পাকড়া ২৬ টি, গীড় ২০ টি, ফ্রিজিয়ান ৫টি, ব্রাহমা ৭টি, দেশী ১০টি, বুট্টি ৩টি, মহিষ ১৫ টি এবং গারল ১৪ টিসহ মোট ১৪১ টি গরু পালন করেছেন তিনি। গরুর দাম কেজি প্রতি নির্ধারন করে দিয়েছেন সেলিম ওসমান। লাইভ ওজন অনুযায়ি ৩০০-৩৯৯ কেজি ওজনের পর্যন্ত পশুর দাম প্রতি কেজিতে পরবে ৪৮৫ টাকা, ৪০০-৪৯৯ কেজি পর্যন্ত পশুর দাম প্রতি কেজি ৫২৫ টাকা, ও যদি পশুর ওজন ৫০০ -৬০০ কেজি বা এর বেশি হয় তাহলে এর দাম পড়বে কেজি প্রতি ৬০০ টাকা। এছাড়াও গারল এর কেজি প্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ টাকা।

RSS
Follow by Email