শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
Led04ফতুল্লাশিক্ষা

আনন্দঘন পরিবেশে তোলারাম কলেজের নবীর বরণ অনুষ্ঠিত

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে নবীর বরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ১০টায় কলেজ প্রাঙ্গনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে ও তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান রিয়াদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও শামীম ওসমানের সহধর্মিনী সালমা ওসমান লিপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল। আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল, শামীম ওসমানের পুত্র ইমতিনান ওসমান অয়ন প্রমুখ।

গানবাজনার মধ্য দিয়ে সকাল থেকে নতুন-পুরাতন শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখেন কলেজের শিল্পিরা। পরে দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন অতিথিরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, যেখন কোন অন্যায় হয় তখন তোমাদের প্রতিবাদ দেখি না কেনো। ছাত্রলীগের ছেলেরা প্রতিবাদ করে, এটা তাদের কাজ। শামীম ওসমানও যদি কোন অন্যায় করে, তোমরা প্রতিবাদ করো না কেনো। তোমাদের কাজ হচ্ছে সমাজকে পরিবর্তণ করে দেওয়া। পৃথিবীর অনেক দেশে শ্রমিক সমাজ আন্দোন করে। কিন্তু বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে ছাত্ররা আন্দোলন করে দেশ স্বাধীন করেছে। তোমরা জানো না হয়তো, ১৯৬৯ এর গণঅভুথানে সারা দেশে ১১জন ছাত্র মারা গিয়েছিলো। এই ১১জনের মধ্যে ১০জন নারায়ণগঞ্জের। এই নারায়ণগঞ্জ সব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। এই কলেজে ছাত্রদে পক্ষে কথা বলার কারণে এক সময়ে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে আমাকে ১৫ রাউন্ড গুলি করা হয়েছিলো। আমি লাফালাফি করছিলাম, আমার শরীরে গুলি লাগায় নাই। তখন আমার স্যার আমার সামনে এসে দাড়িয়েছিলো। পরে যঙখন আমাকে পারে নাই, পরিক্ষা চলাকালিন আবু আউয়াল নামের এক ছাত্রকে গুলি করে মেরেছিলো। আমাদের ৮৫জন ছেলে সেদিন গুলিতে আহত হয়েছিলো।

তিনি আরও বলেন, আমি তোমাদের সাহায্য চাই। আমার বয়স হয়ে গেছে, আমি পারি না। যেখানেই অন্যায়, অবিচার সে যেই হোক না কেন; হোক শামীম ওসমান, তোমাকে তার প্রতিবাদ করতে হবে। কারণ এই দেশ তোমার। লেখাপড়া করলে ভালো ভাবে করো, না হয় কইরো না। খেললে ভালো করে খেলো, না হই খেইলো না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চন্দন শীল বলেন, ১৯৮১ সালের দিকের কথা। সেই সময়ে তোলারাম কলেজে ছাত্রলীগের ঘাটি ছিল। আমরা শিক্ষার্থীরা চাচ্ছিলাম শামীম ওসমানকে ভিপি করা হোক। আবু হাসনাত শহীদ বাদল, খোকন সাহা সহ অনেকেই ছিলাম তখন। আমরাও ইলেকশন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা বলেছি শামীম ওসমানকেই ভিপি হিসেবে দেখতে চাই। এরপর নানা ষঢ়যন্ত্র হলো, বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নির্বাচন হলো। শামীম ওসমান ভিপি হলেন। এর কিছু দিনপর রাজাকার শাহাবুদ্দিন কলেজে আসার কথা। আমরা শামীম ওসমানের নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তোলারাম কলেজে কোন রাজাকারের পদচিহ্ন পড়বে না। আমরা পোস্তগলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আমাদের স্লোগান ছিল জিয়ার কাধে আজব চিজ, রাজাকার শাহাবুদ্দিন ফিরে যাও। উনি ফিরে গিয়েছিলেন। তারই প্রতিশোধ হিসেবে ঐবছর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার সময় ১৪৪ ধারা জারি করে পরীক্ষার্থীদের উপর লাঠি চার্জ, কাদুনে গ্যাস, গুলি ছুড়েছিল। কলেজেরর এই ২য় তলায় আব্দুল আউয়াল নামে ছেলেকে গুলি করা হয়েছিল। সেদিন মূল টার্গেট ছিল শামীম ওসমান।

অনুষ্ঠানে শাহ নিজাম বলেন, এই তোলারাম কলেজ নিয়ে অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে, এই তোলারাম কলেজ অনেক শিক্ষা দিয়েছে। সেই সময়ে তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন আকরাম সাহেব। যখন আমি বয়সে ছোট তখন এখানে আমি এক বক্তব্যে শুনেছিলাম, ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে সুশিক্ষিত হতে হবে, দেশের নেতৃত্ব দিতে হবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা শিক্ষিত হবার পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ হও। পিতা মাতার সম্মান করো, এলাকার গুণি ব্যক্তিদের সম্মান করো, শিক্ষক-শিক্ষীকাদের পিতা-মাতার মতো সম্মান করো। আমি বিশ্বাস করি তাদের দোয়ায় তোমরা আগামী দিনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে।

দুপুর দুইটা বাজে আলোচনা সভা শেষ হলে, বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীদের মাতাতে কলেজে গান পরিবেশন করতে আসেন দেশের জনপ্রিয় সংগীত ব্যান্ড ‘আর্ক’।

RSS
Follow by Email